Image description

পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর, ব্যবসায়ী ও দলটির নেতাকর্মীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপির এম এ কাইয়ুম। টোকাই থেকে চাঁদাবাজ এবং পরে টাকা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জোরে কমিশনার হওয়া এই ব্যক্তি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান পবিত্র মসজিদকে রাজনীতি ও ব্যবসার কাজে ব্যবহার করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। তার নির্দেশে আওয়ামী দোসরদের ‘সেফ জোন’ হিসেবে মসজিদকে ব্যবহার করে সেখানে তাদের নিয়ে গোপন বৈঠক ও তাদের বাঁচানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চুক্তিনামা করা হচ্ছে। এম এ কাইয়ুমের এই ধরনের অপকর্মের প্রমাণাদি মানবকণ্ঠের হাতে এসেছে। 

এতে দেখা গেছে, এম এ কাইয়ুমের সহযোগী খিলক্ষেত ও উত্তরখান এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিকারী বিএনপির আকতার হোসেন ও আওয়ামী লীগের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মোহাম্মদ মোমেন ও সাধারণ সম্পাদক মোকতারসহ দুই দলের নেতাকর্মীরা পাঞ্জাবি টুপি পরে মসজিদে বসে বৈঠক করছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন মানবকণ্ঠকে জানান, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য কেরামত আলী দেওয়ানসহ দলটির অন্য নেতাকর্মীদের বাঁচাতে কাইয়ুমের পক্ষে আকতার হোসেন ওখানে বসে মোহাম্মদ মোমেনের সাথে রফা দফা করেন। 

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করা এই কাইয়ুমের পেছনে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে মদদ দিচ্ছেন স্বদেশ প্রপার্টিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গণঅভুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের এমপি ওয়াকিল উদ্দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি মালয়েশিয়ায় পালিয়ে থাকলেও সেখান থেকেই কাইয়ুমকে সব যোগান দিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের সময়ে তার ব্যবসা বাণিজ্য যাতে স্তিমিত না হয়ে যায় সেজন্য সব প্রচেষ্টাই করছেন এম এ কাইয়ুম। বিএনপির সরকার ক্ষমতায় আসলে সরকারের সাথে সমন্বয় করে ওয়াকিলকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা এবং স্বদেশ প্রপার্টিজের দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করা হবে এই নিশ্চয়তা দিয়ে কাইয়ুম প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য পদও ভাগিয়ে নিয়েছেন সুকৌশলে। 

মানবকণ্ঠের হাতে আসা স্বদেশ প্রপার্টিজের ডকুমেন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ৯ জন শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াকিল উদ্দিন স্বাক্ষরিত নথি অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডাররা হলেন— শহিদুর রহমান, ওয়াকিল উদ্দিন, মোহাম্মদ মজিবুর রহমান চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ, আবু সুফিয়ান, শফিউল আজম খান, মনির হোসেন, ফরসাদ উদ্দিন ও রিয়াসাদ উদ্দিন। অবশ্য ৬ মাস পর চলতি বছরেরই ১ সেপ্টেম্বর ওয়াকিল উদ্দিন স্বাক্ষরিত অপর একটি নথিতে ৭ জন শেয়ারহোল্ডার দেখা যায়। এতে শহিদুর রহমান, শফিউল আজম খান ও মনির হোসেনের নাম দেখা যায়নি। কিন্তু এই শিটে বিএনপির এম এ কাইয়ুমের নাম নতুন করে অন্তর্ভুক্তি হয়।

জানা গেছে, স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চলাকালে গত জুলাই মাসে হুট করে বিএনপির এম এ কাইয়ুমকে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রতিটি শেয়ার ১০০ টাকা করে ৪ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ৪ কোটি ২০ লাখ টাকায় মনির হোসেনের নিকট থেকে কিনে নিয়ে কাইয়ুম শেয়ারহোল্ডার হন। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে কোম্পানির পরিচালকের পদ দেন এমডি ওয়াকিল উদ্দিন। পরে তার হাতে ব্যবসা ও রাজনীতির মাঠ বুঝিয়ে দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন তিনি। এরপর থেকে এম এ কাইয়ুম ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে স্বদেশ প্রপার্টিজের জন্য খাল-বিল দখলের মিশনে নামেন। সরকারি জমি এবং পছন্দের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি করায়ত্ত করে নিতে অনেক ফসলি জমি বিনষ্ট করেন। 

জানা গেছে, আগে যেখানে গডফাদারের দায়িত্ব পালন করতেন পতিত স্বৈরাচার সরকারের এমপি ওয়াকিল উদ্দিন এখন সেই ভূমিকায় আছেন বিএনপির এম এ কাইয়ুম। খিলক্ষেতের বাউতার, তলনা, ডেলনা, উত্তরখানসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। যে কারণে ঢাকা বিমানবন্দর ও খিলক্ষেত লাগোয়া এসব এলাকার মানুষ ভয়ে তটস্থ হয়ে আছেন। ওয়াকিল-কাইয়ুম বাহিনীর অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে প্রায় প্রতিদিনই প্রকম্পিত হয় এলাকাগুলো, নিয়মিত চলে অস্ত্রের মহড়া। 

এলাকাবাসী জানান, ওয়াকিল-কাইয়ুম বাহিনীর এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অগ্রভাগে রয়েছেন আলোচিত স্বর্ণ চোরাকারবারি মনির (গোল্ডেন মনির). বিমানবন্দরে হত্যা মামলার আসামি সফিক। ত্রাস সৃষ্টি করছেন মোবারক দেওয়ান ও আকতার। এরা দুজনেই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। এখন ভোল পাল্টে বিএনপি সেজেছে বলে জানা গেছে। 

এদিকে বিএনপির এম এ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে কূটনীতিক ইতালি নাগরিক হত্যাসহ আরও একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। সাবেক এই ওয়ার্ড কমিশনার ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ যে অভিযোগপত্র দেয়, সেখানে কাইয়ুমসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ পরিকল্পনা করা হয়।’