
লাতিন আমেরিকান সাহিত্যকে বৈশ্বিক অঙ্গনে জনপ্রিয় করার অন্যতম রূপকার, নোবেলজয়ী পেরুভিয়ান ঔপন্যাসিক মারিও ভার্গাস য়োসা ৮৯ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। রবিবার (১৩ এপ্রিল) ৮৯ বছর বয়সে পেরুর রাজধানী লিমায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ যুগের অবসান হল।
বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, 'আত্মীয়, বন্ধু ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পাঠককে তার প্রস্থান শোকার্ত করবে। তবে আমরা আশাবাদী, তার দীর্ঘ, দুঃসাহসিক ও সার্থক জীবনের কথা ভেবে তারা কিছুটা সান্ত্বনা পাবেন, যেমনটা আমরা পাচ্ছি।'
মধ্যবিত্ত পেরুভিয়ান পরিবারে জন্ম নেওয়া ভার্গাস য়োসার সাহিত্যজীবন পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়জুড়ে বিস্তৃত। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকের লাতিন আমেরিকান সাহিত্য ‘বুম’-এর অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ও হুলিও কোর্তাসারের সঙ্গে একই কাতারে বিবেচিত হন তিনি। তবে বিতর্ক ছিল লাতিন আমেরিকান সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই কিংবদন্তির নিত্যসঙ্গী। তিনি ২০১০ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বিচারকেরা তাকে বলেছিলেন, 'ঈশ্বরপ্রদত্ত গল্পকার'।
বর্ণময় ভাষা ও রূপক-চিত্রে কর্তৃত্ববাদ, সহিংসতা আর পুরুষতান্ত্রিকতার তীক্ষ্ণ চিত্রায়ণ তাকে পরিণত করেছিল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া লাতিন আমেরিকান সাহিত্য আন্দোলনের উজ্জ্বল নক্ষত্রে।
তার প্রথম উপন্যাস 'দ্য টাইম অভ দ্য হিরো' ছিল পেরুর এক সামরিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের সময় দেশটির সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ছিল। গল্পের তীব্রতা ও ভয়াবহ চিত্রায়ণ ক্ষুব্ধ করে তোলে কয়েকজন পেরুভিয়ান জেনারেলকে। এক জেনারেল তো তাকে 'বিকৃতমনা' আখ্যা দিয়ে বসেন।
তার দ্বিতীয় উপন্যাস 'দ্য গ্রিন হাউস' (১৯৬৬) ছিল সাহসী নিরীক্ষা। এ কাহিনির ঘটনাস্থল ছিল পেরুর মরুভূমি আর অরণ্য, আর কাহিনির কেন্দ্রে ছিল এক পতিতালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল, ধর্মপ্রচারক ও সৈনিকদের জটিল আঁতাত।
এই দুটি উপন্যাসই ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে 'লাতিন আমেরিকান বুম' নামক সাহিত্যিক নবজাগরণে ভূমিকা রাখে। এ সাহিত্যিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল নিরীক্ষাধর্মী ও প্রবল রাজনৈতিক রচনা।
১৯৯৩ সালে তিনি স্পেনে চলে যান ও স্পেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। একই সময় তিনি পেরুর স্বৈরশাসক ফুজিমোরি বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন।
সোমবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক্স-এ লেখেন, 'মারিও ভার্গাস য়োসাকে বিদায় জানাচ্ছে স্প্যানিশ সাহিত্য। এক বিশ্বজোড়া শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পীর প্রতি একজন পাঠকের কৃতজ্ঞতা রইল। তিনি আমাদের সময়কে বোঝার জন্য যে বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডার রেখে গেছেন, তা অমূল্য।'
Comments