চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন! ছাড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোড়া গাড়িগুলোর কাঠামো। দেখে মনে হতে পারে কোনো অ্যাকশন সিনেমার সেট। কিন্তু না, এটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা!
গেল ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আগে ও পরে যে কয়টি থানা হামলা ও লুটের শিকার হয় তারমধ্যে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা যাত্রাবাড়ী থানার। এখন সেখানে চলছে মেরামতের কাজ। তবে জননিরাপত্তা নিশ্চিতকারী আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লে তার পরিণতি কতোটা ভয়াবহ হতে পারে, তা দেখা যায় যাত্রাবাড়ী থানার ঠিক পাশের এলাকায়।
২৭ আগস্ট রাত ৯টা। যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া স্কুলের পাশের এলাকায় ঘরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে জখম করে অন্তঃসত্ত্বা নারী সীমা আক্তারকে। ঘটনার পর দ্রুত হাসপাতালে নিয়েও বাঁচানো যায়নি মা ও ৭ মাসের সন্তানকে।
ভুক্তভোগী সীমার মা বলেন, ‘‘সীমা বলতেছিল, ‘আমার পেটে সাত মাসের বাচ্চা। আমারে মাইরেন না ভাই।’ তারপরেও আমার মেয়েরে চাকু দিয়ে কোপায়ছে। এমনভাবে আঘাত করেছে যেন না বাঁচে।’’
কীভাবে বাঁচবে, বাবুটার (সীমার পেটের বাচ্চার) বুকের মধ্যে গিয়ে ছুরি বিঁধে আছে। কথাগুলো বলার সময় চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ছিল সীমার মায়ের।
পরদিন যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলেও সাধারণ ডায়েরি নেয় পুলিশ। অবশ্য তিনদিন পর মামলা রুজু হলেও দুই সপ্তাহ পরও এই ঘটনার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি তারা। সীমা আক্তারের স্বামী বলেন, তারা (পুলিশ) বলছে, আমাদের কাছে এখন কিছু নাই, অস্ত্র-সরঞ্জাম কিছু নাই। আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
যাত্রাবাড়ী থানার দশা এতই ভয়াবহ যে এই থানার কার্যক্রম চলছে ডেমরা থানায়। লোকবল সংকটের পাশাপাশি মনোবল সংকটসহ নানাবিধ কারণে যাত্রাবাড়ীর মতো বেশিরভাগ থানাতেই কচ্ছপগতিতে চলছে অপারেশনাল কার্যক্রম। ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন বলছেন, পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে পুরোদমে কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগছে।
তিনি বলেন, আমাদের জনবল একটু কম। যে কারণে আমরা স্বাভাবিক মুভমেন্টে নাই। নিরপেক্ষ কাজ করলে আমরা মানুষের আস্থা ফিরে পাবো। একটা দেশে অনেক রাজনৈতিক দল থাকবে কিন্তু আমরা কোনো দলের দ্বারা মোটিভেটেড হয়ে কাজ করবো না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হবে জননিরাপত্তা জোরদার করা এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার ও নজরদারী বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
Comments