Image description

ঢাকার রায়েরবাগের কদমতলী থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশে গুলিতে গুরুতর আহত আল আমিন কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার এই যুবক বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতের যন্ত্রণা। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে করছেন মানবেতর জীবনযাপন।

আহত আল-আমিন কসবা উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের রাইতলা গ্রামের মৃত একিন আলী ছেলে। ছয় ভাই আর এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। আল আমিন চার সন্তানের জনক। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

তার পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,  আল আমিন করতেন সেলুনের কাজ। অভাবের তাড়নায় ১৫ জুলাই ঢাকায় গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। রায়েরবাগ এলাকায় একটি পরিচিত দোকানে কাজেও যোগ দেন। ১৬ জুলাই তার চোখের সামনে একটি শিশুসহ পিতাকে গুলি করেন পুলিশ। এ ঘটনায় তার মনে দাগ কাটে।

ওইদিনই যোগ দেন আন্দোলনে। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় রায়েরবাগ কদমতলী এলকায় আল আমিনসহ তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে লক্ষ্য গুলি করে পুলিশ। সঙ্গে থাকা দুজন ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও কোনো মতে বেঁচে যান আল আমিন। ছাত্রদের সহযোগিতায় পরে এক ভ্যানচালক হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে। সেখানেও কোনো মুল্যায়ন নেই। ফ্লোরে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন। ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক ঘটনা শুনে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।

আল আমিনের পরিবার প্রায় ২ লাখ টাকা ধারদেনা করে প্রাথমিক চিকিৎসা করালেও অর্থাভাবে হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়। বাহির থেকে ক্ষত শুকালেও পেটের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছে সে। প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার ঔষধ লাগে তার। এ পর্যন্ত কেউই নেয়নি তার খবর।

গ্রামের মানুষের সাহায্যে চলছে আল আমিনের পরিবার। সরকারি সহযোগীতায় তার পূর্ণ চিকিৎসাসহ তাকে আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছে গ্রামবাসী। টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। নতুন করে দেখা দিয়েছে হানিয়া নামক একটি রোগ। চিকিৎসক জানিয়েছে অপারেশন করতে হবে। টাকার অভাবে অপারেশনও করতে পারছেন না গুলিবিদ্ধ যুবক। 

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকালে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি চিকিৎসার জন্য সরকারসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। 

আহত আল আমিনের স্ত্রী সোহেদা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, কিছু টাকা পয়সা ছিল। তা শেষ হয়ে গেছে। তার স্বামীর আরও একটি নতুন রোগ দেখা দিয়েছে। তারও চিকিৎসা করতে পারছে না। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না পেলে চারটি বাচ্চা নিয়ে চলতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, যারা আহত আছে তাদের তালিকা ইতোমধ্যে প্রেরণ করেছি। যারা আহত আছেন ও নিহত হয়েছেন তাদের সরকারি বিধি নির্দেশনা মোতাবেক সহযোগিতা করা হবে।