মুসলিমদের কাছে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় একটি প্রাণী বিড়াল। সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বিড়াল খুব পছন্দ করতেন। রাসুলের দরবারে থাকা অবস্থায় একবার তাঁর চাদরের আস্তিন থেকে একটি বিড়ালছানা বেরিয়ে পড়ে। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে মজা করে বলেন, ‘ইয়া আবু হুরায়রা !’ অর্থাৎ ‘হে বিড়ালের পিতা!’
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, বিড়াল নামাজ বিনষ্ট করে না। কারণ তা ঘরের জিনিসপত্রের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৯)
অনেক সাহাবিই বিড়াল পালতেন বলে বর্ণিত রয়েছে। তবে শর্ত হলো বিড়ালের যথাযথ যত্ন নিতে হবে, খাবার দিতে হবে। অনাহারে রাখা যাবে না।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জনৈক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে বিড়ালটি বন্দি করে রাখে, এ অবস্থায় সেটি মারা যায়। সে এটি বন্দি করে রেখে পানাহার করায়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি যেন সে নিজে জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারে। (সহিহ বোখারি: ৩৪৮২)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, এ হাদিস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেঁধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খাবার-পানি দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়। (ফাতহুল বারি: ৬/৪১২)
তবে বিড়াল পোষা সুন্নত নয়। অনেকে বিড়াল পোষাকে সুন্নত মনে করেন -এটা ঠিক নয়। নবিজি (সা.) বিড়াল পুষেছেন এ রকম গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। যদিও নবিজির (সা.) ঘরে মাঝে মাঝে বিড়াল আসতো এবং তিনি বিড়াল কাছে এলে তাড়িয়ে দিতেন না তা বোঝা যায় বিভিন্ন বর্ণনা থেকে।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, একবার নবিজি মদিনার বাতহান নামক স্থানে গেলেন, তখন তিনি আমাকে অজুর পানি এনে দিতে বললেন। আমি অজুর পানি এনে দিলাম। নবিজি (সা.) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে যখন অজু করার জন্য পানির পাত্রটি নিতে যাচ্ছিলেন, তখন একটি বিড়াল এসে পানির পাত্রে মুখ দিয়ে পানি খেতে লাগলো।
নবিজি (সা.) বিড়ালটির পানি খাওয়া শেষ হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। আমি প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, বিড়াল ঘরের প্রাণী। বিড়াল মুখ দেওয়ার কারণে পানি নোংরা বা নাপাক হয় না। (নাসবুর রায়াহ)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা তোমাদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে।
আয়েশা (রা.) আরও বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে অজু করতে দেখেছি। (সুনানে আবু দাউদ: ৭৬)
এ দুটি বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, বিড়ালের মুখ দেওয়া পানি সাধারণ অবস্থায় নাপাক নয়। তবে বিড়ালের মুখে কোনো নাপাকি লেগে থাকলে বিড়ালের মুখ দেওয়া পানি নাপাক হবে।
তাই তো উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও বাড়িতে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল রাখার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। রাসুলের প্রিয় সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বিড়ালের সঙ্গে সব সময় আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতেন। ইসলামী জীবনযাপনের পাশাপাশি হয়তো বিড়ালের নিরবচ্ছিন্ন সাহচর্যেই তিনি সব সময় প্রাণবন্ত ছিলেন।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments