Image description

৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে ব্যর্থতা, দলের নেতা-কর্মীদের চলমান হত্যাকাণ্ড বন্ধে বর্তমান সরকারের নিষ্ক্রিয়তা, আইনের শাসন ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া এবং বিভিন্ন স্থানে হামলা অগ্নিসংযোগ ও নিরাপত্তা প্রদানে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানিয়ে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ।

গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সামনে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সস্পাদক মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল হক এবং পরিচালনা করেন বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী রতন।

সমাবেশে জানানো হয়, বাংলাদেশে জুলাই মাসে হওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিতে, দলের নেতা-কর্মীদের চলমান হত্যাকাণ্ড বন্ধে বর্তমান সরকারের নিষ্ক্রিয়তা, হামলাকারীদের দায়মুক্তি, আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা এবং শাসনব্যবস্থা সমুন্নত রাখায় ব্যর্থতাসহ দেশকে আরও বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত করার জন্য ডা. ইউনূসকে দায়ী করে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী বিক্ষোভ করেছেন।

এ সময় তারা সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা বন্ধ ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারের ব্যর্থতা, শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ, সারা দেশে 'মব জাস্টিস' এর উত্থান এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃঢ় পদক্ষেপের অভাবের প্রতিবাদ করে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ।

তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি-জামাত ক্যাডাররা সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে হামলার ঘটনায় ড. ইউনূসের নীরবতায় হতাশ হয়ে তারা ইউনূসের নিষ্ক্রিয়তাকে বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের প্রহসনের সমতুল্য বলে অভিহিত করেছেন। 

অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট থেকে প্রতিদিনই সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের সংগঠিত সহিংসতার শিকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আমাদের দলের নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে, তাদের বাসস্থানে হামলা ও লুটপাট করা হচ্ছে, পরিবারগুলোকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে এবং কোনো অবকাশ না থাকায় দুষ্টচক্র তীব্রতর হচ্ছে।'

ইউনূস যখন অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার এবং জাতি সংস্কারের দাবি করেন, তখন তিনি কীভাবে এসব হামলার বিরুদ্ধে নীরবতা পালন করতে পারেন এবং আওয়ামী লীগকে সংলাপ থেকে বাদ দিতে পারেন এই প্রশ্ন তোলেন তিনি। 

অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নেতারা জানায়, যে বিচার বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অঙ্গগুলিতে চলমান শুদ্ধি একটি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে সংস্কার করার জন্য জাতিসংঘের আহ্বানকে লঙ্ঘন করা হয়েছে এখানে। ড. ইউনূস শাসনামলে সকল মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন উপস্থিত সকলে। তারা আদালত প্রাঙ্গণে বন্দীদের উপর হামলা, দলীয় নেতাদের আটক এবং বিচার বিভাগের রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে এবং গণহত্যার শাসনের অবসান এবং চলমান গণহত্যা বন্ধ করার জন্য বিশ্ব শক্তির কাছে আবেদন জানায়।

আন্দোলনের সময় আইনের শাসনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তারা আন্দোলনের শুরু থেকে প্রতিটি মৃত্যুর নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু বিচার দাবি করে।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি সমর্থকদের টার্গেট করে অন্তত ২৬৯টি মামলা দায়েরের কথা উল্লেখ করে তারা এই ষড়যন্ত্রটিকে দলীয় নেতাকর্মীদের কারারুদ্ধ করার পদক্ষেপ এবং দলকে দমন করতে বিচারিক হয়রানির সুস্পষ্ট চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরের সামনে সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণে তারা বিক্ষোভ করেন এবং বিক্ষোভে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন। 

এ সময় তাদের হাতে থাকা পোস্টার ও প্লেকার্ডে লেখা ছিল, 'বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াত কর্তৃক জনতার সহিংসতা বন্ধে বিশ্বকে কথা বলতে হবে' এবং 'আমরা সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাই'।

প্রশাসনের অপসারণ, শিক্ষকদের জোরপূর্বক অপসারণ এবং বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য ড. ইউনূসকে দায়ী করে তারা জানায়, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতর থেকে কর্মকর্তাদের জোরপূর্বক অপসারণের জন্য প্ররোচনা প্রদানের জন্যই অপপ্রচার গুলো চালু রয়েছে, যদি এগুলো বন্ধ করা না হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর অখণ্ডতা নষ্ট হবে এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।

ব্রাসেলসে সদর দফতরের সামনে জড়ো হয়ে বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বর্তমান সরকারের অসৎ আচরণের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমর্থন জোগাড় করার অংশ হিসাবে প্রতিবাদটি করে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ।