Image description

বাংলাদেশে বার বার বিপ্লব সম্ভব হলেও সংস্কারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর গভীর বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। বিপ্লব বলতে সাধারণত র‌্যাডিক্যাল বা হঠাৎ পরিবর্তন বোঝায়, যা জনগণের আবেগ, হতাশা এবং নেতৃত্বের উত্থানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিটি অধ্যায়ই বিপ্লবের প্রতিফলন। কিন্তু বিপ্লবের মাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটলেও টেকসই সংস্কারের পথে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক হলো ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যপূরণে তৎপরতা। বিপ্লব স্বল্প সময়ের জন্য জনগণকে একত্রিত করতে পারে, কিন্তু এর ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং টেকসই সংস্কার গড়ে তোলা দুরূহ। সংস্কার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, নীতিমালা এবং জনসাধারণের মানসিকতায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনে। 

তবে বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ প্রায়ই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, এবং জনগণের অংশগ্রহণের অভাবে থমকে যায়। বিপ্লবের ক্ষেত্রে সাধারণত নেতিবাচক বাস্তবতা বা সংকট বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সংস্কারের জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, সুসংগঠিত পরিকল্পনা এবং সুশাসনের প্রতিশ্রুতি। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক খাতে মাইক্রোক্রেডিট বিপ্লব বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটালেও শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতে কাক্সিক্ষত সংস্কার এখনো অনেক দূরে। শিক্ষাব্যবস্থায় সেশনজট দূরীকরণ, কারিকুলাম আধুনিকীকরণ, এবং জনস্বাস্থ্যে সবার জন্য সাশ্রয়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা, এগুলো সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত, যা ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রয়োজন।

তাছাড়া, সংস্কারের পথে প্রধান বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রতিরোধ, সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও আধুনিকীকরণের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে কৃষক ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চলছে। এ সমস্যা সমাধানে বিপ্লবের পরিবর্তে নীতিগত সংস্কারের প্রয়োজন, যা ধীরগতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধের কারণে বার বার ব্যর্থ হয়।

তবে, আশার আলোও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগ, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এগুলো সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলেও এর প্রভাব সীমিত। বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া সংস্কারের পূর্ণ সফলতা অর্জন কঠিন। বাংলাদেশে বার বার বিপ্লব সম্ভব হলেও টেকসই সংস্কারের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনসম্পৃক্ততা, এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। বিপ্লব তাৎক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু টেকসই উন্নয়ন ও প্রগতির জন্য সংস্কারের বিকল্প নেই। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সংস্কারমূলক উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের ওপর।

লেখক: শিক্ষার্থী