রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া অভিজিৎ হালদার (১৮) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসা ও অনিয়মের অভিযোগে পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হল ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হসপিটাল, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার রাজধানীর প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়। তারা হাসপাতালের মূল ফটকের নামফলক খুলে ফেলে। একপর্যায়ে কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে যোগ দেয়। ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া চলাকালীন পাঁচ ছয়জনকে আহত অবস্থায় রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিজিত হাওলাদার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তির দুইদিন পর ১৮ নভেম্বর মারা যান। ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়। কিন্তু বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।
অভিযোগকারীদের একজন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আমাদের বন্ধুর মৃত্যুতে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা একটি দাবি রাখি। আজকে আন্দোলনে করতে আসার সময় পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা হলে শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা এগিয়ে আসি। কিন্তু কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদলের কর্মীরা এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমাদের কারো হাতে লাঠি ছাড়া কিছুই নেই। তবে তাদের হাতে রামদা, চাপাতি ছাড়াও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র রয়েছে। পুলিশও তাদের সাহায্য করছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রেজাউল হক বলেন, গত ১৬ নভেম্বর সকালে অভিজিৎ হালদার নামে এক শিক্ষার্থীকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। পরে তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় তার অবস্থার অবনতি হলে রোগীর অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সব চিকিৎসা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও ১৮ তারিখ মারা যায় অভিজিৎ। এখানে আমাদের কোনো ত্রুটি কিংবা অবহেলা ছিল না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যু পরবর্তী মরদেহ হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রোগীর আত্মীয়কে বুঝিয়ে দেন এবং রোগীর সম্পূর্ণ বিল স্থগিত রাখা হয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে হাসপাতালে পরিচালকের কক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছাত্র প্রতিনিধি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয় এবং মৃত্যুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবেন এবং সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Comments