গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক। বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করতে যেন এক কাইয়ূমই যথেষ্ট। সূত্র জানায়, হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া এম এ কাইয়ূমের বাবা মৃত মো. আব্দুল হাই ছিলেন নিম্ন আয়ের মানুষ, মা ছিলেন গৃহিণী। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা আব্দুল কাইয়ূমের কর্মজীবন শুরু হয় ভ্যান গাড়িতে করে গামছা বিক্রির মাধ্যমে। গত দেড় যুগেই তিনি কীভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হলেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
লোকমুখে শোনা যায়, একসময় গুলিস্তানের ফুটপাতে ভ্যানে করে গামছা বিক্রি করতেন কাইয়ুম, অতঃপর শ্রমিকদের মাঝে নিজের আধিপত্য গড়ে তুলে হয়ে ওঠেন শ্রমিক নেতা, অতঃপর আওয়ামী লীগ-বিএনপির সাবেক বর্ষীয়ান নেতাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের সাথে সখ্য গড়ে তোলে একসময় নিজেই নেতা বনে বসেন এই কাইয়ূম।
কাইয়ূমের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি থেকে সুবিধা নিলেও আওয়ামী লীগ আমলে আর্থিকভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেন এম এ কাইয়ূম। আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াকিল ও স্বর্ণ চোরাকারবারি গোল্ডেন মনিরের সাথে মিলে গড়ে তোলেন স্বদেশ প্রপার্টিজ। দখলদারিত্বের মাধ্যমে শত শত কৃষকের ফসলি জমি এবং সরকারি খাস জমিসহ জলাশয় ভরাট করে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট বানিয়ে বসেন এই কাইয়ূম।
ওয়াকিল ও মানিকের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে নিজের স্বদেশ সাম্রাজ্য বিস্তারে এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তিনি করেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনে স্বদেশ প্রপার্টিজের নামে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির দায়ে একাধিক তদন্ত হয়।
আরও খবর পড়ুন: ৩ মাফিয়ার আঁতুড়ঘর স্বদেশ প্রপ্রার্টিজ
বিভিন্ন সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনিরের মাধ্যমে দুবাই-মালয়েশিয়ায় স্বর্ণ চোরাকারবারির সাথে জড়িত এই কাইয়ূম। স্বর্ণ চোরাকারবারির জের ধরেই তার উপর অভিযোগ এসেছিল সিজার তাবেলা হত্যাকাণ্ডের। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী শাসনামলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে তাল মিলিয়ে চালিয়ে গেছেন স্বদেশ প্রপার্টিজের দখলদারিত্বের কার্যক্রম।
সম্প্রতি জলাশয় ভরাট করে দখলদারিত্ব চালানোর দায়ে স্বদেশ স্বর্ণালী ভ্যালি প্রজেক্টের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। বিশেষ এক অনুসন্ধানে জানা যায়, এম এ কাইয়ূম সরকারের কাছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গোপন রেখেছেন। অবৈধ অর্থের উৎস এবং বিবরণী গোপন রেখে ধরাকে সরা বানিয়েছেন।
আয়কর নথিমূলে কাইয়ূমের আয়ের উৎস : লাখো কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক এম এ কাইয়ূম তার নির্বাচনী হলফনামা এবং আয়কর বিবরণীতেদেখিয়েছেন সামান্য কিছু খরচ। যা একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের খরচের কাছাকাছি। তিনি দেখিয়েছেন- ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয় ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪০ টাকা। ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ৪ লাখ ৭৯ হাজার ২২৪ টাকা।
আয়কর নথিমূলে দেখানো কাইয়ূমের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব- দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান ব্রাঞ্চ (এফডিআর) (১০০১), জমাকৃত ৩৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৩ টাকা। দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান ব্রাঞ্চ (এফডিআর) (১০২০), জমাকৃত ৩২ লাখ ১০ হাজার ৬৯৩ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান ব্রাঞ্চ (এফডিআর), জমাকৃত ১৮ লাখ ১ হাজার ৯৪৩ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেড, বনানী ব্রাঞ্চ, জমাকৃত ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা। দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান ব্রাঞ্চ, ঢাকা (২০০১), জমাকৃত ১ লাখ ৫৬ হাজার ১১২ টাকা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান ব্রাঞ্চ, জমাকৃত ১ হাজার ৪৮১ টাকা।
এছাড়া ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, বারিধারা ব্রাঞ্চ (২৫৮১), জমাকৃত ২ লাখ ২০ হাজার ৫৩০ টাকা। আয়কর বিবরণীতে এম এ কাইয়ূমের রয়েছে মোট ৯ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার ১০২ টাকা। কিন্তু এসবের উৎস সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেয়া নেই। কাইয়ূম কর্তৃক প্রথম আয়কর বিবরণীতে লক্ষাধিক টাকার সম্পদ দেখালেও ২০২৪/২৫ অর্থবছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার অর্থসম্পদের মালিক দেখিয়েছেন নিজেকে। যদিও তার এক স্বদেশ প্রপার্টিজেই রয়েছে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
নাম না প্রকাশের শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবকণ্ঠকে জানান, কাইয়ূমের প্রথম আয়কর বিবরণী হাতে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তার প্রদত্ত সম্পদের বিবরণীর বাইরে যা রয়েছে, তাই আয়বহির্ভূত। যার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করা হবে।
Comments