Image description

গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশের মাটিতে পলাতক শেখ হাসিনাসহ তার দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে গুম করেছে, খুন করেছে, সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে। জিয়া পরিবারের প্রতি অমানুষিক নির্যাতন করেছে। যে হাসিনার কারণে আমাদের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছিল, যে হাসিনার কারণে দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত চায় বিএনপি।

সম্প্রতি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মানবকণ্ঠের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্নেহভাজন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক। রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে দেশের রাজনীতি, নির্বাচন, সংস্কার, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুথান হয়েছে, সেখানে ২৮টি ছাত্র সংগঠন মিলে বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার করেছিল। সেই ব্যানারে সবচেয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির। তারপর অন্যান্য বাম ও ছাত্রসংগঠন এখানে যুক্ত হয়েছে। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, জাতিকে এক প্রকার জিম্মি করে ফেলেছে বিগত খুনি হাসিনা সরকার। সেই জিম্মি দশা থেকে আমরা মুক্তি লাভ করেছি। দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রাম লড়াই শেষে এবং তিন তিনটি ভুয়া নির্বাচন শেষে, বহু ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বিজয়। এর মাধ্যমে আমরা আশা করি গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা আবার শুরু হবে। অগ্রযাত্রাকে কেউ থামায়ে দিতে পারবে না।  এরপর থেকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভালো থেকে ভালো কিছু হবে।

নির্বাচন বানচালের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোনো নাম বলতে চাচ্ছি না। তবে এখনো সরকারের ভেতরে-বাইরে থাকা কিছু সুশীল- একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে, যেখানে এমনটা দেখানো যায়, যে বাংলাদেশে নির্বাচন করার কোনো পরিস্থিতি নাই। এখানে অন্য কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করার জন্য তাদের এই ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এ রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা রয়েছে। আমাদের ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানটি হয়েছে- এর মূল কারণ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। 

ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরাতো সরকার না, বিচার করবে সরকার। আমরা বিরোধী দল, প্রতিদিন চিৎকার করে বিচারের জন্য কথা বলে যাচ্ছি এবং বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা কিন্তু বলেছি বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। 

অনেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে ইশরাক বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে, তাদের পুনর্বাসিত হবার কোনো সুযোগ নেই। এটা আমরা হতে দেব না। সোজা কথা। কোন উপায়ে নিষিদ্ধ করা হবে, কোন উপায়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে সেটা বিচারিক বিষয়। আমি আগে ফাঁসি চাই, রায়ের আগে আমি ফাঁসি দাবি করলে বিচার প্রক্রিয়াকে অনেকটা হস্তক্ষেপ করার শামিল। আমরা চাই না বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। 

আপনি কি মনে করেন বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচারটাকে ত্বরান্বিত করলে আরো ভালো হতো। 

দলে চেইন অব কমান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তিনি তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। উনি আমাকে মেয়র নমিনেশন দিয়েছেন। উনার নেতৃত্বে আমি রাজনীতি করছি। উনার একক ইচ্ছায় আমরা তরুণরা রাজনীতি করে যাচ্ছি। আজকে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান হয়েছে। উনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। 

বহিরাগতরা দলের কেউ না জানিয়ে ইশরাক বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকার প্রশ্নে বলেন, তাদেরকে দল শোকজ করছে, কেউ পার পাবে না। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো একটি দলকে অথবা একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর সব ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেটা কিন্তু এখনও আমরা পাইনি। সেজন্য আমাদের লড়াইটা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। যদি প্রয়োজন হয়, আমাদের দেশনায়ক তারেক রহমান যদি নির্দেশ দেন, আবারও আমরা প্রয়োজনে জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তবুও এ দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না।

তিনি আরও বলেন, আগেও বলেছি, এখনও বলছি এই দেশটা কারও বাবার নয়। যেকোনো ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব। দেশে নির্বাচিত সরকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইশরাক হোসেন বলেন, জনগণ যাকেই ভোট দিক নতুন পার্টি, পুরান পার্টি, এ পার্টি, বি পার্টি তাকেই-আমরা মেনে নেব। কিন্তু জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে সেই সরকারকে আসতে হবে। তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এরপর যে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার আছে সেটি তারা বাস্তবায়ন করবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, দলে কোনো অনুপ্রবেশকারীদের স্থান দেয়া যাবে না। এটা সকল নেতাকর্মীকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কোনো অন্যায় করা যাবে না, আওয়ামী লীগের সাথে আপোষ করা যাবে না। তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করার বার্তা দিয়েছেন। আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করব। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে, গণতন্ত্রের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে বিদেশের মাটিতে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। আওয়ামী লীগের সাথে আপোষ করেননি। 

কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তাকে দল থেকে বাদ দেয়া হবে উল্লেখ করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার যোগ্যপুত্র ইশরাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে বিচার গেলে তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের কিছু বলতেন না। আমরা কিন্তু কাউকে ছেড়ে দেব না, মেসেজ ক্লিয়ার।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক বলেন, ১৬ বছর ধরে খুনি হাসিনার সরকারের নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও আমাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে পারেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বৈরাচাররা ক্ষমতা ছেড়েছেন কিন্তু দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া লাগেনি। কিন্তু হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। 

তিনি আরো বলেন, পতিত হাসিনা বিএনপিকে দমন করতে রাষ্ট্রের প্রতিটি শক্তি ব্যবহার করেছে। আমাদের এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যে মামলায় জর্জরিত নন। শুধু নেতাকর্মীরাই নয়, তাদের পরিবারের প্রতিও করা হয়ে অবিচার-অনাচার। 

ইশরাক জানান, ফ্যাসিস্ট হাসিনা শুধুমাত্র নিজের রাজত্ব ধরে রাখতে, লুণ্ঠিত অর্থ নিরাপদ রাখতে দেশে গণহত্যা চালিয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন দমন করতে পৃথিবীতে কোনো স্বৈরশাসক এত হত্যাযজ্ঞ চালায়নি। হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার মত নির্মমতাও তারা দেখিয়েছে। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার ত্বরান্বিত করতে হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে  ইশরাক বলেন, খালেদা জিয়াকে যখন অন্যায়ভাবে বন্দি করা হয় তখন গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তারেক রহমান। জুলাই বিপ্লবেও একদফার আন্দোলনের ছক তৈরি করেছিলেন তারেক রহমান। কিন্তু এগুলো আমরা কখনও জাহির করে নাই। কিন্তু ৫ আগস্টের পর একটি অপশক্তি এবং গুটিকয়েক রাজনৈতিক দল জুলাই বিপ্লবের কৃতিত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যার কারণে এ আন্দোলনে কাদের ভূমিকা মুখ্য এবং জোরালো ছিল তা আমরা জনসমক্ষে প্রকাশ করেছি। আমারও মনে হয় না এগুলো জনগণের কাছে আমাদের প্রমাণ করতে হবে। আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি তা জনগণ যথেষ্ট ওয়াকিবহাল রয়েছে। 

তিনি বলেন, আমাদের এই সংগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দক্ষিণ এশিয়ার কোনো রাষ্ট্র যাতে আমাদের রক্তচুক্ষ দেখাতে না পারে। এই লক্ষ্যই যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে আমাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের চূড়ান্ত পরিক্ষা দিতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। 

ইশরাক হোসেন জানান, সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির হাতে দেশে যত সংস্কার হয়েছে তা কারো হাত দিয়ে হয় নাই। তিনি বলেন, ১৬টি বছর জনগণ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে ভোটের অধিকারের জন্য। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে নিজের ভোট নিজে দেয়ার জন্য। অথচ, রক্তের বিনিময়ে পতিত স্বৈরশাসকের বিদায় হলেও ভোট নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে।