বাবা হওয়া—এটি শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি জীবন্ত অনুভূতি, এটি এমন এক অভিজ্ঞতা যা একজন পুরুষের হৃদয়ে অবিনশ্বর পরিবর্তন এনে দেয়। বাবা হওয়ার মুহূর্তটি শুধুমাত্র শারীরিক বা মানসিক প্রস্তুতির বিষয় নয়, এটি একটি গভীর অভ্যন্তরীণ যাত্রা, যেখানে আবেগ, দায়িত্ব, ভালোবাসা এবং এক অব্যক্ত স্বপ্ন একত্রিত হয়ে এক নতুন পৃথিবী তৈরি করে। সমাজে, বিশেষত পুরুষদের জন্য, বাবা হওয়ার সঠিক সময় কখন? এই প্রশ্নটি প্রায় প্রতিটি পুরুষের জীবনে এক চিরকালীন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একজন পুরুষ কখন অনুভব করবেন যে, তিনি সত্যিই প্রস্তুত, যে এই নতুন জীবনের জন্য তার হাতে সময় এসেছে?
বিভিন্ন গবেষণা এবং সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, ৪০ বছর বয়সের পর পুরুষদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানে শারীরিক সক্ষমতা কমে আসে। সাধারণভাবে, একজন পুরুষের শারীরিক প্রস্তুতি সবচেয়ে ভালো থাকে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে। এই বয়সে পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মান ভালো থাকে এবং সন্তান ধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ৪০-এর পর শুক্রাণুর সংখ্যা কমতে থাকে এবং তাদের গুণগত মানও কমে যেতে পারে। এটি শুধুমাত্র একপক্ষীয় দৃষ্টিভঙ্গি নয়। ৫০ বছর বা তারও বেশি বয়সী পুরুষদের জন্যও সন্তান ধারণ সম্ভব। কারণ, পুরুষের শরীরে শুক্রাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়া কখনোই থামে না, তারা জীবনের যে কোনো বয়সে সন্তানের বাবা হতে পারেন। তবে, বয়সের সঙ্গে শুক্রাণুর গুণগত মানের পরিবর্তন ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স বাড়লে শুক্রাণুর ডিএনএ-তে পরিবর্তন আসতে পারে, যা সন্তান ধারণে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
যখন পুরুষরা বেশি বয়সে বাবা হন, তখন নবজাতকের স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে, বেশি বয়সে বাবা হওয়া শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কিছু গবেষণা দেখিয়েছে যে, ৪৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানদের মধ্যে অটিজম, ডাউন সিনড্রোম এবং অন্যান্য স্নায়ুজনিত রোগের ঝুঁকি একটু বেশি থাকে। এসব বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন।
তবে, এটি সবসময় ঘটবে না। ৫০ বছরের বেশি বয়সী অনেক পুরুষ সফলভাবে সন্তানের বাবা হয়েছেন এবং তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যও ভাল ছিল। এমনকি, গিনেস বুক অব রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী, ৯২ বছর বয়সী এক পুরুষ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যা অবশ্যই বিরল ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা থেকে প্রমাণ হয় যে, বাবা হওয়ার বয়সের কোনো একক সীমা নেই, কিন্তু এতে ঝুঁকি বেশি থাকে।
বাবা হওয়ার সঠিক সময় নির্ধারণ করতে পুরুষদের অনেক কিছু ভাবতে হয়—শারীরিক, মানসিক, এবং আর্থিক প্রস্তুতি। যদি একজন পুরুষ ৫০ বছর বয়সে সন্তানের বাবা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে তার প্রস্তুতি আরো বেশি গুরুত্ব পায়। শুধু নিজের স্বাস্থ্য নয়, তাকে পরিবার, আর্থিক দিক এবং সন্তানের ভবিষ্যত নিরাপত্তার বিষয়েও চিন্তা করতে হয়। এ ছাড়া, বয়সের কারণে স্নায়ুজনিত কিংবা জেনেটিক সমস্যার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, একেকটা জীবন নিজস্বভাবে গড়ে ওঠে। একটি শিশু বড় হতে, ভালভাবে পালিত হতে এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, একজন বাবার সঙ্গ, পারিবারিক সহায়তা, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক সময়ে বাবা হওয়ার জন্য, আপনার কাছে যদি এসব দিক থাকে, তবে আপনার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই সুফল বয়ে আনবে।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments