Image description

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ যে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, তার মধ্যে উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি অন্যতম প্রধান। আধুনিক জীবনের চাপ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, এবং অতীতের হতাশাজনক অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে আমাদের মস্তিষ্কে উদ্বেগের বীজ বোনা হয়ে যায়। তবে, সঠিক অভ্যাস এবং মনোযোগী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের মন এবং শরীর একে অপরের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। অতএব, শরীরের মাধ্যমে মনকে শান্ত করা, এবং মনের মাধ্যমে শরীরকে শিথিল করা—এই দুটো বিষয় একসাথে কাজ করলেই আমরা উদ্বেগের মোকাবিলা করতে পারি।  চলুন জেনে নেয়া যাক এমন তিনটি সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপ, যেগুলি আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।

১. মনোযোগী থাকা: অশান্তি প্রশমনের প্রথম ধাপ 
উদ্বেগের একটি বড় কারণ হলো অতীতের অভিজ্ঞতা বা ভবিষ্যতের চিন্তা আমাদের মনকে গ্রাস করে ফেলে। এ সময় আমাদের শরীরেও চাপ চলে আসে, এবং চিন্তার স্রোত এত দ্রুত চলে যে, আমরা বর্তমানে যা ঘটছে তা অনুভব করতে পারি না। এর ফলে আমাদের সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সব সময় নিজের সব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।

এই প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ, যখনই আপনি উদ্বেগ অনুভব করেন, গভীরভাবে শ্বাস নিন। তারপর শ্বাস ত্যাগ করুন। ধীরে ধীরে আপনার শরীরের প্রতিটি অংশে মনোযোগ দিন যেমন, আপনার হাত,  পা  বা গলা—এবং দেখুন কোথায় আপনি অতিরিক্ত চাপ বা টেনশন অনুভব করছেন। ধীরে ধীরে সেই টেনশনগুলো মুক্তি দিতে চেষ্টা করুন।

মনোযোগী থাকার মাধ্যমে আপনি আপনার অনুভূতি ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারেন, যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে। এটি আপনার মস্তিষ্কে নতুন স্নায়ুবিক প্যাটার্ন গঠন করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে আরও শান্ত থাকতে সহায়তা করবে।

২. আত্মবিশ্বাস: মানসিক নিরাময়ের চাবিকাঠি 
উদ্বেগের এক বিশেষ উপসর্গ হলো নিজেকে খুব কঠোরভাবে বিচার করা। শৈশবে যদি কেউ আমাদের শাস্তি বা সমালোচনা করে থাকে, তবে আমরা নিজের প্রতি কঠোর হতে শিখি। অনেক সময় মনে হয়, শুধুমাত্র কঠিন হলে আমরা সফল হতে পারব, কিন্তু এটি আসলে আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।

এখানে তাই আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে সহানুভূতির চোখে দেখতে শেখা অর্থাৎ আমরা যখন ভেঙে পড়ি, তখন নিজের প্রতি এক বন্ধু হিসেবে ভালোবাসা এবং সমর্থন প্রদর্শন করা।

আমাদের মনে রাখতে হবে, কেউই নিখুঁত নয়—প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়। তাই, যখন আমরা ব্যর্থ হই, তখন নিজেকে দোষী মনে না করে, বরং নিজের প্রতি ভালোবাসা এবং সহানুভূতি অনুভব করা উচিত। এটি আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তি যোগাবে।

৩. নিজের অনুভূতি, চিন্তাভাবনা বা ধারণার প্রকাশ 
উদ্বেগ শুধু মানসিক নয়, শারীরিকভাবেও আমাদের শরীরে চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সময় উদ্বেগ, দুঃখ বা অতীতের যন্ত্রণাগুলো আমাদের শরীরে জমে যায়। আমাদের এই জমে থাকা আবেগগুলো মুক্তি দিতে হবে, যাতে আমরা পূর্ণ উদ্যমে জীবনযাপন করতে পারি।

তাই নিজের অনুভূতি, চিন্তাভাবনা বা ধারণার প্রকাশ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আপনি যদি নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারেন, তবে তা আপনাকে মানসিকভাবে মুক্তি দেবে। লেখালেখি, ছবি আঁকা, গান গাওয়া—এগুলো সবই আবেগ মুক্তির উপায়। বিশেষ করে, নিজের অনুভূতি এবং ভয়গুলো লিখে ফেললে, আপনি সেই যন্ত্রণার সাথে সুরাহা করতে পারবেন। লেখালেখি না শুধু আপনার চিন্তাভাবনাকে পরিষ্কার করবে, বরং আপনি নিজেকে জানার সুযোগ পাবেন এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারবেন। এটি নিজেকে মুক্তি দেওয়ার একটি শক্তিশালী উপায়।

মানবকণ্ঠ/এসআর