Image description

আপনার ডিভাইসের মেমোরি ফুল হয়ে যাওয়ার নোটিফিকেশন কি আপনাকে বিরক্ত করে? এটিই হয়ত ডিজিটাল যুগের নতুন বাস্তবতা। কিন্তু এই অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় ফাইল, স্ক্রিনশট, অপঠিত ইমেইল - এই সব মিলে আপনার ডিজিটাল জীবনকে করে তুলছে জঞ্জালে পরিপূর্ণ। তবে এই ডিজিটাল জঞ্জাল শুধু আপনার ডিভাইসকেই নয়, আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

"অসংখ্য ই-মেইল, ছবি, খোলা ট্যাব - অতিরিক্ত ডিজিটাল ডেটা সংগ্রহের কারণে প্রচুর চাপ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হয়," বলে ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা.সুসান আলবারস জানান। "আমাদের পূর্বপুরুষদের এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি, কিন্তু আজকের দিনে আমাদের দৈনন্দিন জীবন প্রচুর ডিজিটাল জঞ্জালে ভরা," তিনি যোগ করেন। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল জঞ্জাল (ডিজিটাল ক্লাটার) কমানো এবং আপনি কখন এই ব্যাধির লক্ষণ প্রদর্শন করতে পারেন তা জানার জন্য  কিছু উপায় রয়েছে।  চলুন জেনে নেয় সেই উপায় গুলি-

আপনি যদি প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে পেতে হাজার হাজার ছবি বা ফাইলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম মনোযোগ এবং মানসিক শক্তি অনুভব করেন, তাহলে এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে আপনার অতিরিক্ত ডিজিটাল ক্লাটার (অব্যবহৃত ডিজিটাল বস্তু) রয়েছে বলে জানান আলবারস ।

ডিজিটাল জঞ্জাল আমাদের শারীরিক জগতে প্রকৃত জঞ্জালের মতোই চাপ সৃষ্টি করে কেননা আমাদের মস্তিষ্ক স্পষ্টতা এবং সরলতাকে বেশি পছন্দ করে বিশৃঙ্খলার চেয়ে । 

তিনি আরও যোগ করেন, ডিজিটাল জঞ্জালকে একটি ধারাবাহিক নোটিফিকেশনের প্রবাহ হিসাবেও দেখা যেতে পারে, যা আপনার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে এবং আপনাকে ধীর করে দিতে পারে।  তাই বার বার ডিভাইসে নোটিফিকেশন দেখার প্রণতা থাকলেও আপনার অতিরিক্ত ডিজিটাল ক্লাটার (অব্যবহৃত ডিজিটাল বস্তু) রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।

ডিজিটাল জঞ্জাল কেন ক্ষতিকর?

চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি: অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় ডিজিটাল ডেটার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া আপনাকে চাপ ও উদ্বেগগ্রস্ত করতে পারে।

মনোযোগ কমে যাওয়া: অসংখ্য নোটিফিকেশন ও টাস্কের মধ্যে আপনার মনোযোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে ফলে আপনি কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না।

উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া: অপ্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজতে সময় নষ্ট হওয়ায় আপনার কাজের গতি কমে যেতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব: দীর্ঘদিন ডিজিটাল জঞ্জালের মধ্যে থাকলে আপনি বিষণ্ণতা, অবসাদ এবং একাকিত্ব বোধ করতে পারেন।

আলবার্সের মতে ডিজিটাল ক্লাটার কমানোর কিছু টিপস দেওয়া হলো:

১. অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন এবং আপনার ইমেইলে জমা হওয়া বিজ্ঞাপনগুলির সাবস্ক্রিপশন বাতিল করুন। নোটিফিকেশনের সংখ্যা সীমিত করে, আপনি মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেন। ফলে আপনি নিজের কাজে বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।

২. সময় নির্ধারণ করুন: আপনার ই-মেইল এবং সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন চেক করার সময় সীমিত করুন এবং অন্যান্য সময় আপনার ডিভাইসের সাইলেন্স বা ডু নট ডিস্টার্ব ফিচার ব্যবহার করুন। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনি যে-সব অ্যাকাউন্ট ফলো করেন সেগুলোর সংখ্যা সীমিত করুন। ফলে আপনার ফিডে জঞ্জাল কমবে এবং অযথা স্ক্রোল করার সময়ও কম হবে।

৩. একটি ডিজিটাল ডিটক্স (ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে বিরত থাকা) দিন নিন: একদিন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করে অন্য কোনো কাজে সময় ব্যয় করুন। অন্তত দিনের কিছু সময় নিজেকে ডিজিটাল জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখুন, যা আপনাকে জঞ্জাল এবং ধারাবাহিক নোটিফিকেশনের দ্বারা অভিভূত বোধ করা থেকে রক্ষা করতে পারে।  

৪.ফাইল সাজানো: আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজান যেন সহজেই সেগুলি পেতে পারেন। 

এই সহজ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি আপনার ডিজিটাল ক্লাটার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও সম্ভব হবে।

মানবকণ্ঠ/এসআর