Image description

ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা। দিন-দুপুরেই খুনোখুনি ডাকাতি-দস্যুতা, নিত্যনতুন কৌশল দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে রাজধানীর অপরাধীরা। কেবল বাসা লুটপাটই নয়- নৌপথ, সড়ক-মহাসড়কেও ডাকাতি-দস্যুতা বেড়েই চলছে। ঈদকে সামনে রেখে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। রাজধানীসহ সারা দেশে বাসাবাড়ি ও সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি ও দস্যুতা কিছুতেই থামছে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নানা উদ্যোগেও তারা বেপরোয়া। 

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদযাত্রায় এসব অপরাধমূলক ঘটনা ঘরমুখো মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ডাকাতি-দস্যুতার অভিযোগে মোট এক হাজার ৯০২টি মামলা হয়। প্রতি মাসে গড়ে ১৫৯টি মামলা। চলতি বছর এসব ঘটনায় প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ৪৬৯টি মামলা হয়। প্রতি মাসে গড়ে ২৩৫টি মামলা। ২০২৩ সালে প্রতি মাসে গড়ে ১২৯টি মামলা হয়। 

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাকাতি-দস্যুতার অভিযোগে যত মামলা হয়, প্রকৃত ঘটনা আরো বেশি। কারণ অনেকে হয়রানি ও ভোগান্তির কথা ভেবে ডাকাতি বা দস্যুতার শিকার হলেও পুলিশের কাছে যেতে চান না। তাই এসব ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে পরিবহন খাতের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন; বিশেষ করে ঈদে রাতে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের আশঙ্কা বেশি। সংবাদসূত্রে জানা যায়- গত সোমবার রাতে সড়কে গাছ ফেলে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস আটকে যাত্রীদের মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ লুট করে নেয় ডাকাতরা। 

একই রাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ধানখালী ইউনিয়নে কাতারপ্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ৮টায় সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় চলন্ত বাসে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর মনোহরদীতে সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। হাইওয়ে পুলিশের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ৪০০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০ বছরে মহাসড়কে ডাকাতির বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা এই তালিকায় রয়েছে। 

তবে গবেষণা ও সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য রোডের তথ্য মতে, গত আট মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে চার হাজার ৫০৫টি ছিনতাই এবং ২৫৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সড়কপথে এক হাজার ৮৬৮টি ছিনতাই আর ১১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এমন চিত্র খুবই উদ্বেগের। হাইওয়ে পুলিশ ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে নিত্যনতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে অপরাধীরা। চুরি করতে গিয়ে খুন করা হয় বাসার মালিককে। দিন-দুপুরে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। প্রায় প্রকাশ্যেই ঘটছে অস্ত্রবাজি ও খুনাখুনি। প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মাঝে মাঝেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে দুর্বৃত্তদের। তারা হামলে পড়ছে প্রতিপক্ষ কিংবা সাধারণ মানুষের ওপর। 

সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ভেদ করা বুলেটে সাধারণ মানুষের নির্মম মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। মানুষ এসব কারণে স্বস্তিতে নেই। এমন চিত্রই বলে দেয় দেশের মানুষ কত উদ্বেগের মধ্যে বাস করছেন! এসব অপরাধীদের ঠেকাতে সম্প্রতি নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি অভিযানের গতি আরও বাড়ানো হয়েছে। তাতেও কাজ হচ্ছে না। নানান কায়দায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। কারণ এর সুযোগ নেবে দেশি-বিদেশি নানা মহল। একটি বিষয় দুঃখজনক হলেও সত্য- সারাদেশে পুলিশ প্রশাসনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আট মাসেও তাদের গতি ফেরেনি। 

এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে সারাদেশ। এসব সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বর্তমান নাজুক অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বলছেন- অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে ঈদ ঘিরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থনে রয়েছে পুলিশ। আমরাও চাই- সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এনে অপরাধীদের নির্মূলে ব্যবস্থা নেয়া হোক। সর্বোপরি পুলিশ বাহিনীর অবকাঠামোগত সংস্কার করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।