Image description

সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে সারা বছরই কম বেশি ঘটতে থাকে। কিন্তু সড়কের স্বাভাবিক নিরাপত্তায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকলেও কাজের কাজ যে খুব হয়, তা কিন্তু নয়। দেশের বৃহৎ উৎসব দুটো ঈদ। একটা ঈদুল ফিতর অন্যটা ঈদুল আজহা। এই দুই ঈদকে ঘিরে মানুষ যে যেভাবে পারে অনেক কষ্ট সহ্য করে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ি যায়। 

এ যাওয়া নতুন নয়। কিন্তু প্রতিবছরই সড়কের একই চিত্র চোখে পড়ে। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে নিরাপদ সড়কের জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকে বলে মনে হয় না। ঈদে সড়কে মানুষের চাপ বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশাসনিক দপ্তরগুলোর প্রস্তুতি থাকলে ফিটনেসহীন গাড়ি সড়কে দাপিয়ে বেড়ায় কীভাবে? ঈদকে কেন্দ্র করে লঞ্চ থেকে সড়ক পথে সব ফিটনেসহীন পরিবহনকে রং করে সড়কে নামানো হয়। তারপর সড়ক দুর্ঘটনায় ঈদ বিষাদে পরিণত হয়। ঈদেও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবারই ঘটছে। 

এবারের ঈদুল ফিতরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সব যেন অবিকল আগের দৃশ্য। ঈদের ছুটির চার দিনে দেশের ১০টি বড় সরকারি হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আহত হন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের করা গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ঈদুল আজহায় সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল মোটরসাইকেল; ৫১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। 

এবার মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা প্রায় সমান। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত কোরবানির ঈদের প্রতিবেদনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কোনো হিসাব ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবার ঈদে কয়েকটি হাসপাতাল তাদের রোগী নিবন্ধন খাতায় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে অটোরিকশার তথ্যও সংরক্ষণ করে। 

এবার ঈদের ছুটির চার দিনে (৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল) রাজধানীর দুটি এবং ঢাকার বাইরে আট বিভাগীয় শহরের বিশেষায়িত আটটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীর তথ্য বলছে-দেশের ১০ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঈদের আগের দিন থেকে টানা চার দিনে মোট ১ হাজার ১৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন (৩২ দশমিক ২৭), ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি দুর্ঘটনায় ৩৬৫ (৩২ দশমিক ১০ শতাংশ) জন আহত হন। বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মতো চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন ১১৫ জন। 

তবে চিকিৎসা নেয়া ২৯০ জনের আহত হওয়ার কারণ লেখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাহলে এত সড়ক, এত সেতু তার সুবিধাটা জনগণ ভোগ করলো কীভাবে? টানা ছুটির মধ্যে কারও কারও আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই অপ্রতিরোধ্য ও প্রতিকারহীন সড়ক দুর্ঘটনা, এই অসহায় মৃত্যু ও আহতদের জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকার দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী কে বা কারা? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের গাড়ি চালকদের বেশিরভাগ অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত, অনেকের লাইসেন্স নেই, অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। এদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেয়া বিপজ্জনক। 

অথচ মালিকদের একাংশ সেটাই করছে। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। সেখানেও রয়েছে দুঃখজনক গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণার তথ্যমতে, প্রতিবছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। এসব দুর্ঘটনার প্রভাবে আর্থিক ক্ষতি হয় বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ১.৬ শতাংশ জিডিপি হারায় দেশ। এর পরও সড়ক দুর্ঘটনা থামছে না।

এসব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া  জরুরি। নতুবা এই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বন্ধ হবে না। উৎসব যেভাবে কান্নায় পরিণত হয় সেটা আমাদের বারবার দেখতে হচ্ছে। এ চিত্র বদলানো একান্ত জরুরি।