রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এই ভাঙনে উপজেলার প্রায় ৫টি ইউনিয়নের দেড়শতাধিক পরিবার পড়েছে হুমকির মুখে। এছাড়াও ভাঙছে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
এই ৫ ইউনিয়নে ঘরবাড়ি ছেড়েছে প্রায় ৫০ পরিবার। এসব পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে রাস্তায় গবাদি পশু ও পরিবার নিয়ে বাস করছে। অন্যদিকে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ খুঁটি। পানি বৃদ্ধিতে পুকুর, জলাশয় ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে চাষকৃত বিভিন্ন ফসল। এখন ভাঙনে দিশেহারা পরিবারগুলো।
তথ্য অনুযায়ী, গংগাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের নিম্নাচঞ্চল ও চরের আলফাজটারী, আনছারেরটারী, নরশিং মধ্যপাড়া, হাসানটারী, আলমারবাজার, গজঘণ্টা ইউনিয়নের নিলারপাড়া, আলালচর, ছালাপাকচর, গাওছোয়া, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, পশ্চিম ও পূর্ব ইচলী, বাগেরহাট, কেল্লারপাড়, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, চিলাখালচর, মটুকপুরচর, নোহালী ইউনিয়নের মিনারবাজার, নোহালীচর, বৈরাতীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন।
সরেজমিনে শনিবার মর্নেয়া চরের আলফাজটারী গেলে দেখা যায়, শাফিকুল, আজিজুল, ওয়াহাব, ছামাদ, মোরসেদুল, আবেদ আলী, আব্দুল হাকিম, হামিদ, হালিম, রহিম, জববার, মতিন, মতিয়ার, জলিল, মজমুল, আব্দুল করিম, মশিয়ার, ছালাম, আব্দুর রহমান, পছা, শরিফুল, ছেরাব উদ্দিন, মোশফেকুল, মনির, সিরাজুল, জছির, জলিল, হামিদুলসহ ৫০ পরিবারের বাড়িঘর ভিটেমাটি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনে নিঃস্ব শাফিকুল ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন, কোনোরকমে ঘরের টিন খুলে নিতে পারলেও অনেক জিনিসপত্র ভেসে গেছে। ভাঙাগড়ায় ভাইয়ের জায়গায় খুলে নেওয়া টিন রেখেছি। কোথায় নতুন করে বাড়ি করবো দিশা পাচ্ছি না। হাতে নেই তেমন টাকা, দিনমজুরীতে চলে সংসার।
আবেদ আলী বলেন, আমার একমাত্র বাড়ির জায়গাটুকু তিস্তায় গেল। এখন কোথায় বাড়ি করব সেই উপায় পাচ্ছি না। তাছাড়া স্ত্রী রাবেয়া সন্তান প্রসব করেছে ২৪ দিন হলো, তাকে ভালোমত থাকতে দিতে পারছি না। ঠিকমত খেতেও দিতে পারছি না। সরকারি কোনো সাহায্যও মেলেনি।
এজারুল ও আলমগীর জানায়, তাদের এলাকার আরও ৫০ বাড়িসহ আনছারটারীর শতাধিক বাড়ি ভাঙন হুমকির মুখে পড়েছে। আনছারটারীর ছয়ফাল, গফুর, বাচ্চা জানায়, তাঁরা ভাঙন থেকে বাঁচতে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের পাইলিং দিচ্ছেন।
মর্নেয়া চরের বয়স্ক আব্দুর রহমান বলেন, এগুলো দেখে কী করবেন। এলাকার অনেক বাড়ি, আবাদি জমি, গাছপালা, বিদ্যুৎ খুঁটি সব ভেঙে গেলেও কেউ দেখতে আসে নাই। ভেঙে পড়া বিদ্যুৎ খুঁটি বিদ্যুতের লোক বললেও সেগুলো সরিয়ে নিচ্ছে না। বাড়ি ভাঙা পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানান আব্দুর রহমান।
মর্নেয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিস্তায় ৫০–এর বেশি পরিবারের বাড়ি ভেঙে গেছে। কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, বাকিদের দেওয়া হবে। তালিকা করা হচ্ছে।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম বলেন, ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ভাঙন কবলিত পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যাদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁদেরও দেওয়া হবে। ইউপি চেয়ারম্যানকে তালিকা করতে বলা হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, নিচু এলাকায় ভাঙন রোধে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তবে ভাঙন রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মানবকণ্ঠ/এফআই
Comments