পটুয়াখালীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়ার দুই দিন পর অর্ধগলিত অবস্থায় আল-আমিন খন্দকার (২৬) নামের এক যুবক মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে শহর সংলগ্ন লাউকাঠি নদীর তীরে সরকারি খাদ্য গোডাউন ঘাটের পাশ থেকে ভাসমান অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আল-আমিন খন্দকার সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সারিকখালী গ্রামের মৃত খালেক খন্দকারের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে পৌর সভার ৯নং ওয়ার্ডস্থ বিসিক মাঠ এলাকায় সন্দেহজনিত কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এসআই সোহানের নেতৃত্বে আরও দুইজন সদস্য সিভিল পোশাকে আল-আমিন, মো. জহিরুল ইসলাম (৩০) ও রাসেল ঘরামীকে (২৮) ধাওয়া করেন। এ সময় আল-আমিন ও মো. জহিরুল ইসলাম ভয় পেয়ে পটুয়াখালী ব্রিজের পশ্চিম পাশে তুলাতলা নামক স্থান থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন। নদী সাঁতরে মো. জহিরুল ইসলাম অপর পাশে গেলেও আল-আমিন তখন থেকেই নিখোঁজ।
নিখোঁজের ৪৬ ঘণ্টা পর আজ আল-আমিনের মরদেহ জেলা সরকারি খাদ্য গোডাউনের পাশে ভাসতে দেখলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের জানান স্থানীয়রা। পরে প্রায় অর্ধগলিত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় প্রশাসন।
এদিকে শুধু সন্দেহজনিত কারণে সরকারি সংস্থার সদস্যদের এমন দায়িত্বহীন আচরণে ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা।
নিহতের চাচা বলেন, ‘ওখানে আপগাড়ির লোকেরা যাইয়া শুধু শুধু তাদের ধাওয়া করছে, তখন বুইডা মানু ভয়ে পানিতে পড়ছে। এদের মধ্যে একজন সাঁতার কেটে ওপার চইলা গেছে আর আমার ভাতিজা আল-আমিন বলছে বাঁচাও বাঁচাও, তখন তারা এই কথাও বলছে যে ওই লোক কি সাঁতার জানে? এরপর তারা চইলা গেছে। উনাদের তো উচিত ছিল সবাইকে বিষয়টা জানানো। উনারা ধাওয়া দিয়ে একজনকে ধরছে কিন্তু তার কাছে কিছুই পায়নি। মূলত প্রশাসনের গাফলতির কারণেই এই কাজটা হইছে।’
আল-আমিনের সঙ্গে নদীতে লাফ দেওয়া জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই জায়গায় বসা ছিলাম। এর মধ্যেই একজন বলে পাইছি শালাগো, ওদের ধর। এই কথা বলার পরই আমি আর আল-আমিন নদীতে ঝাঁপ দিই। আমি সাঁতরাইয়া ওপার চইলা গেছি কিন্তু আল-আমিন আর যাইতে পারে নাই। মাদকের স্যারেরা আমাগো শুধু শুধু ধাওয়া দেছে, কোনো কারণ ছাড়াই।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এসআই সোহানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. সফিকুর রহমান মিয়া বলেন, সেদিন দুইজন সিপাহি নিয়ে এসআই সোহান অভিযান পরিচালনা করেছে। আমি যতটুকু জানি তার কাছে গোপন সংবাদ ছিল যে সেখানে তিন ব্যক্তি গাঁজা কেনা-বেচা করছে এবং গাঁজা খাচ্ছে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই দুইজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। আরেকজনকে আমাদের অফিসার তল্লাশি করেন কিন্তু তার কাছে কিছু পাওয়া যায়নি। তখন আমাদের অফিসার সেখান থেকে চলে আসে।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, সকালে লাউকাঠি নদীর পাড় থেকে ভাসমান অবস্থায় আল-আমিন নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments