Image description

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ডিসেম্বর থেকেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। তবে শয্যা সঙ্কটে এই শীতের মাঝেও রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝেতে বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। ফলে ডায়রিয়ার সাথে সাথে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। হাসপাতালটিতে অনুমোদিত ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড  থাকলেও ১২টি শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কর্যক্রম চলছে।  তবে সেটিও পরিচালিত হচ্ছে বরিশাল সদর হাসপাতালের ভাঙাচোরা একটি ভবনে। বছর দুয়েক আগে সেই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলে সেখানে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তাই বর্তমানে  হাসপাতালের একটি টিনসেড কক্ষে এই কর্যক্রম চলছে। 

জানা যায়, গ্রীষ্মে সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিলেও এবার শীতের শুরু থেকেই এটি দেখা যাচ্ছে। গত ডিসেম্বরেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৫১৮জন চিকিৎসা নিয়েছে। যে সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল মাত্র২৬১ জন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০০ শয্যার বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে ১২টি শয্যা। শীতের শুরুতেই বৃদ্ধরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা চিকিৎসা নিতে আসছেন এই হাসপাতালে। আর, এমন স্বল্প পরিসরে (১২ শয্যার), সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখানে, প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছেন ২০ জন রোগী।

গত ৭ দিনে বরিশাল সদর হাসপাতালে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৯৬ রোগী। এই রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ওয়ার্ডের মেঝেতে। বৃহস্পতিবার ১২ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, ২১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১২টি বেডের বাইরেও ৯ রোগীকে রাখা হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝে-তে। তাদের প্রত্যেককেই আইভি স্যালাইন (শিরায় দেয়া) দেয়া হচ্ছে। একটু সুস্থবোধ করলেই দিয়ে দেয়া হচ্ছে ছাড়পত্র।

ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স শিল্পী রানী নাথ বলেন, ওয়ার্ডে ১২টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২০জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অতিরিক্ত রোগীদেরকে ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগী পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই শয্যা সংকটের কারণে রিলিজ করে দেয়া হচ্ছে। কারণ নতুন রোগীদের চিকিৎসা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, ভবনের কাজ চলমান থাকায় ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি ৪টি বেড প্রস্তুত ছিল। কিন্তু গতবছরের ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আরো ৮টি বেড় সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই শীতে ব্যাপক হারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় রোগীদেরকে ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আইভি স্যালাইন সংকট নেই বলে এই চিকিৎসা জানিয়েছেন।

শীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ প্রসঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, কিছু কিছু ভাইরাস আছে যেগুলো শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি উভয়কেই আক্রমণ করে। এই ধরনের সমস্যা শীতের দিনে বেশি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জার কয়েকটা স্ট্রেন এবং রোটাভাইরাস এই সমস্যার মূল কারণ। সর্দি-কাশি, জ্বরের সঙ্গে লুজ মোশন বা পেট খারাপ, পেটে ব্যথা, বমি ইত্যাদি হলে দুটোকে একসঙ্গে সাধারণত কোল্ড ডায়রিয়া বলে। যদিও এটা স্থানীয় টার্ম। 

মানবকণ্ঠ/এসআর