
কীর্তিনাশা নদীতে বাল্কহেডে ডাকাতি করতে এসে জনতার পিটুনির ঘটনায় আরও দুটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একটি লাশ সোমবার সকালে নদীর শরীয়তপুর সদর উপজেলার টুমচর এলাকা থেকে এবং অন্যটি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নে বিদ্যাবাগিস সেতুর নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে পিটুনির ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁরা সবাই ডাকাত দলের সদস্য। এ ছাড়া জনতার পিটুনিতে আহত আরও পাঁচজন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপর দিকে ডাকাত দলের ছোড়া গুলিতে আট ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ডাকাতি করতে গিয়ে পালানোর সময় পিটুনির ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শরীয়তপুরের পুলিশ সদস্যরা একটি ও মাদারীপুরের পুলিশ সদস্যরা একটি লাশ উদ্ধার করেছে। আমরা ওই ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছি।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘কীর্তিনাশা নদী থেকে আজ আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করছি, লাশটি ডাকাত দলের সদস্যের। এ নিয়ে পরপর দুই দিন দুটি লাশ এই নদীতে ভেসে উঠল। লাশ দুটির কোনো পরিচয় জানা যায়নি। তাঁদের পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশ কাজ করছে।’
ডাকাতির ঘটনার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, কিছু উত্তেজিত মানুষ একটি ট্রলারে ডাকাত দলের কয়েকজন সদস্যকে পেটাচ্ছেন। একপর্যায়ে তাঁদের নদীতে ফেলে দিচ্ছেন।
নিহত ছয়জনের মধ্যে একজনের পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির নাম এবাদুল ব্যাপারী (৪৮)। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কানারগাঁও এলাকার বাসিন্দা। ময়নাতদন্তের পর গতকাল রোববার তাঁর মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত অন্য পাঁচজনের মধ্যে দুজনের মরদেহ রয়েছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে, একজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দুজনের মরদেহ মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ওই পাঁচজনের পরিচয় এখনো পায়নি পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত করার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রাজারচর এলাকায় কীর্তিনাশা নদীতে বালু পরিবহনের বাল্কহেডে ডাকাতি করতে আসে ১০-১২ জনের একটি দল। তখন ওই এলাকার নৌযান শ্রমিকেরা ও স্থানীয় লোকজন ডাকাত দলকে ধাওয়া করেন। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা গুলি ও ককটেল বোমা ছুড়ে স্পিডবোটে পালাতে থাকেন। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ডাকাত দলের এক দফা সংঘর্ষ হয়।
ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে শরীয়তপুরের দাদপুর এলাকা থেকে ডোমসার তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কীর্তিনাশা নদীর দুই তীরে ও নদীতে নেমে স্থানীয় লোকজন ডাকাতদের ধাওয়া করতে থাকেন। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে ডোমসার তেঁতুলিয়া এলাকায় নদীতে স্পিডবোট ফেলে একটি ইটভাটায় পালান ডাকাত দলের সদস্যরা। স্থানীয় লোকজন ওই ইটভাটা ঘেরাও করে ডাকাত দলের সাত সদস্যকে আটক করে পিটুনি দেন। পিটুনিতে ডাকাত দলের দুই সদস্যের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। শনিবার তেঁতুলিয়া এলাকার ওই ইটভাটা থেকে আরেক ব্যক্তিকে আটক করে জনতা পিটুনি দেন। শনিবার রাতে আহত ব্যক্তিদের একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। আর রোববার বিকেলে মাদারীপুরের কালকিনির বিদ্যাবাগিস এলাকার কীর্তিনাশা নদী থেকে আরেক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুরের পুলিশ। এরপর সোমবার সকালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার টুমচর এলাকায় কীর্তিনাশা নদীতে ভেসে থাকা একটি লাশ উদ্ধার করল পালং মডেল থানার পুলিশ। বিকেলে মাদারীপুর সদর উপজেলার বিদ্যাবাগিস সেতুর নিচ থেকে সর্বশেষ আরেকটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments