Image description

নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে পা দিয়ে লিখে এবার এইচএসসি পাস করেছে ফরিদপুরের নগরকান্দার জসিম। উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের দিনমজুর বাবা হানিফ মাতুব্বর ও তছিরন বেগমের বড় ছেলে জসিম। ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। পা দিয়ে লিখেই পেয়েছে জিপিএ-৪.২৯।
 
জানা গেছে, জন্মের পর থেকেই জসিমের দুটি হাত নেই। তারপরও দারিদ্র্যের কারণে জীবন সংগ্রামের কঠিন পথে নামতে হয় তার। কৃষক বাবার সংসারে হাল ধরতে ছোটবেলা থেকেই দক্ষতার সঙ্গে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যায় অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থী। পা দিয়েই মোবাইল সার্ভিসিং করে জোগায় লেখাপড়ার খরচ।
 
জানা যায়, নগরকান্দা সদর বাজারের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে মনা মোবাইল সার্ভিসিংয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে জসিম। জসিম খেলতে পারে ক্রিকেট ও গাইতে পারে মুর্শিদি গান। তার অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরি করার প্রবল বাসনা জসিমের। 
 
শুক্রবার দুপুরে কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিমের সঙ্গে। জসিম জানায়, আমার বাবা একজন দিনমজুর। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করছি। সেই অর্থ দিয়েই ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি সবার সহযোগিতা চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, পড়ালেখা শেষ করে আমি যেন সরকারি একটা চাকরি করতে পারি।
 
তার মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ওস্তাদ মনা মিয়া বলেন, জসিমকে দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, পা দিয়ে যদি ও লিখতে পারে, তাহলে সব কাজই করতে পারবে। তাই ওর পায়ের দুই আঙুলের ফাঁকে স্ক্রু ড্রাইভার ধরিয়ে দিই। মাত্র ১ বছরের মধ্যেই ও মোবাইলের সব ধরনের কাজ শিখেছে।
 
জসিমের বাবা হানিফ মাতুব্বর বলেন, আমার ৫ সন্তানের মধ্যে জসিম সবার বড়। জন্মের পর থেকেই তার দুটি হাত নেই। চলাফেরাও ঠিকমতো করতে পারে না। তবে জসিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সে অনেক মেধাবী। বিশেষ করে পড়ালেখার প্রতি অনেক ঝোঁক তার। বাবা হিসেবে ছেলের এই সাফল্যে আমি গর্বিত।
জসিমের মা তছিরন বেগম বলেন, আমার ছেলে জসিম জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী হলেও কোনো কাজে সে পিছিয়ে নেই। খেলাধুলাসহ সব কাজ সফলতার সঙ্গে করে আসছে। আর পড়ালেখার প্রতি ছোটবেলা থেকে অনেক আগ্রহ তার। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার খবরটি শুনে আমাদের অনেক আনন্দ লাগছে। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আল্লাহ আমার ছেলের মনের আশা পূরণ করুক। 
 
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হক বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় হাতবিহীন জসিমের পাস করার খবর শুনেছি। এটা সত্যিই হাজারটি ভালো খবরের মধ্যে একটি সেরা অর্জনের খবর। তাই আজ থেকে তার উচ্চ শিক্ষার জন্য সব খরচ বহন করবে উপজেলা পরিষদ। এ ছাড়াও তাকে ৬০ হাজার টাকার একটি ফান্ড করে দিয়েছি।