Image description

ছাত্রলীগের মাধ্যমে নির্যাতিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমকে স্ব-পদে পুনর্বহালের দাবিতে ভিসি বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছে 'বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ' নামক শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। 

স্মারকলিপির প্রদান শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদের সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার এম ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে আমাদের স্যারদের, ছাত্রদের অত্যাচার করা হয়েছে, অকথ্যভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যার উত্তম একটা উদাহরণ হচ্ছে জাহাঙ্গীর আলম স্যার। তার রুমে ঢুকে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ বাহিনী নির্যাতন করেছে, সেখান থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করেছে।

তিনি বলেন, এটার বিরুদ্ধে স্যারেরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। চারজন ছাত্রলীগ কর্মী বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তাদের কোর্টে বহিষ্কার করা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বহিষ্কারাদেশ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা একাডেমিক কার্যক্রমও ভালোভাবে করেছে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেছে। স্যারেরা যেটা বলার চেষ্টা করেছেন, উনারা আইনের ফ্রেমের বাইরে কোনও কিছু করতে পারবেন না। উনারা হয়তো আইনিভাবে সহযোগিতা করবেন। স্যারের সাথে বসে উনারা শর্টেজ কী কী ওয়ে (উপায়) আছে সেগুলো ফিগার আউট (উদঘাটন)করতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বলতে চাই, যে মানুষটা দীর্ঘ ৯ বছর মজলুম হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাকে আবার ক্রিটিকাল (জটিল) কোনও আইনের মধ্য দিয়ে তার পুনর্বহালকে দীর্ঘায়িত করাকে স্পষ্টভাবে নিন্দাবাদ জানাই।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীরকে অতি দ্রুত পুনর্বহালের দাবি ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. ড. জাহাঙ্গীরের ওপর নির্যাতন, অপমান-অপদস্তকরণ এবং বৈষম্যমূলক আচরণের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে বুয়েটের অর্ডিন্যান্স ও ফৌজদারীবিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. বিভিন্ন সময়ে বুয়েট প্রশাসনের অসহযোগিতা ও সাবেক প্রো-ভিসি আব্দুল জব্বারের প্রত্যক্ষ মদদে ক্রমাগত হুমকি-ধমকি এবং মামলা-গ্রেপ্তারের মতো অনৈতিক চাপের মাধ্যমে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয় ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে। তাই ওনার অব্যাহতিপত্র অনতিবিলম্বে বাতিলপূর্বক ৫ কর্মদিবস তথা আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পুরকৌশল বিভাগে স্বপদে সসম্মানে যোগদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্য হয়ে বুয়েটের টিচার্স কোয়ার্টার ছাড়তে হয়, অনৈতিকভাবে বিভাগের কনসাল্টেন্সি থেকে বিরত রাখা হয়, অন্যায়ভাবে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং মিথ্যা মামলায় প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই বুয়েট কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে পূর্বের বকেয়া সকল বেতন-ভাতা পরিশোধপূর্বক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. ফ্যাসিবাদের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা থেকে ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতের অব্যাহতি গ্রহণে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা বুয়েট প্রশাসনকে দিতে হবে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে তৎকালীন জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের ফাঁসির ঘটনায় ফেসবুকে একটি কমেন্ট করার জেরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কুনজরে পড়েন তিনি। ওই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা, মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় হেনস্তা, বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা ও পরামর্শক থেকে অলিখিতভাবে বাদ দেওয়া, বুয়েট কোয়ার্টারের বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং শেষমেশ ২০২২ সালে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তিনি। এ ঘটনার পিছনে একই বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক উপ-উপাচার্য ড. আব্দুল জব্বারকে দায়ী মূল হোতা হিসেবে দায়ী করেছেন তিনি।