Image description

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ৯টি বাস ও ৩টি মাইক্রোবাস বিক্রির উদ্দেশ্যে গত মাসের ২১ তারিখে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে এই দরপত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ক্রয় করতে ও জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরকেও দরপত্র বিক্রি করতে বাধা দিয়েছেন তারা। গত রবিবার (১৭ নভেম্বর) বিকালে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক ও কর্মকর্তাদের শাসিয়ে দরপত্র বিক্রি করতে নিষেধ করে যান। তবে স্থানীয় বিএনপি’র ওই নেতাকর্মীদের পরিচয় দিতে পারনেনি কেউ।  

পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গেল মাসের ২১ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ৯টি বাস ও ৩টি মাইক্রোবাসের জন্য মোট ১২টি দরপত্র আহ্বান করা হয়। যা ক্রয়ের সর্বশেষ তারিখ দেওয়া হয় ১৭ নভেম্বর ও জমাদানের সর্বশেষ তারিখ দেওয়া হয় ১৮ নভেম্বর। ১২ টি গাড়ির বিপরীতে দরপত্র বিক্রি হয় মাত্র ৪৯টি। যার মধ্যে ৪৩ টি দরপত্র দাখিল করেন ঠিকাদাররা। ৪৩ টি দরপত্রের মধ্যে ৩ প্রতিষ্ঠানই জমা দিয়েছে ৩৬ টি। বাকি ৬টি দরপত্র জমা দিয়েছেন ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মো. আব্দুল মালেক নামের এক ঠিকাদার ৬ টি দরপত্র ক্রয় করলেও তা আর জমা দেননি। নিয়মানুসারে ১ টি কাজ বা কোন কিছু ক্রয়ের জন্য কমপক্ষে ৩ টি দরপত্র জমা হতে হবে। যদি ৩টির কম জমা হয়, তাহলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে হিসেবে ১২টি গাড়ি ক্রয়ের জন্য কমপক্ষে ৩৬টি দরপত্র জমা হতে হবে।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে টেন্ডার জমা দেওয়ার কথা। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোষাধ্যক্ষের কক্ষের সামনে টেন্ডার বক্স পাওয়া যায়নি। পরে এক ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রকে সাথে নিয়ে এসে টেন্ডার জমা দিতে আসে। কিন্তু কোনো বক্স না পেয়ে তারা হইচই শুরু করে। পরে তাদের তোপের মুখে পৌঁনে ১টার দিকে টেন্ডার বাক্স বের করা হয়। তবে বাক্স বের করা হলেও নিজের ক্ষোভের জায়গা থেকে তিনি আর দরপত্র জমা দেননি। এদিকে, দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত একটি দরপত্রও জমা দেননি কেউ।

টেন্ডার জমা দিতে আসা ওই ব্যক্তি হলেন মো. রুহিদ আমিন। তিনি রাজশাহী নগরীর জিন্নানগর এলাকার বাসিন্দা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বড় ভাইয়ের হয়ে টেন্ডার জমা দিতে আসি। তবে, সকাল থেকে ২বার টেন্ডার জমা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু জমা দিতে পারিনি। কোষাধ্যক্ষের কক্ষের সামনে টেন্ডারের বাক্স থাকার কথা। তবে সেখানে ছিল না। তাই জমা দিতে পারিনি।

টেন্ডার বাক্স কেন বাইরে রাখা হয়নি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই জেনেছি কে বা কারা বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এজন্য নিরাপত্তা জনিত কারণেই বাক্স সামনে না রেখে আমার কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখেছিলাম। পরে বের করা হয়েছে। বিকাল ৪টায় টেন্ডার জমা শেষে বাক্স সিলগালা করি।’

এদিকে দরপত্র কিনতে এসে কয়েকজনের বাঁধার সম্মুখীন হয়ে ফিরে গেছেন ইশতিয়াক হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি গতকাল রাজশাহী নগরীর মালদা কলোনী থেকে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের হয়ে দরপত্র কিনতে এসেছিলেন। তিনি জানান, গত রবিবার সাড়ে ১২টায় তার বড় ভাই মৃদুলের হয়ে দরপত্র কিনতে আসেন। দরপত্র কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকের সামনে গেলে ৫-৬ জন লোক তাকে বাঁধা দিয়ে বলেন, শিডিউল কেনা নিষেধ আছে। পরে তিনি দরপত্র ক্রয় না করেই চলে যান। তবে 'কে বা কারা বাঁধা দিয়েছে?' জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন চলাচল করি না। তাই আমি তাদেরকে চিনতে পারিনি।

শুধু ঠিকাদারদের দরপত্র কিনতেই বাঁধা দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসককেও দরপত্র বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন বিএনপির ওই নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, 'গতকাল (রবিবার) দরপত্র ক্রয়ের শেষ দিন ছিল। আমরা যেন আর দরপত্র বিক্রি না করি এজন্য তিনজন ব্যক্তি এসে আমাকে নিষেধ করে হুমকি দিয়ে যায়। বিক্রি হওয়া সবগুলো দরপত্রের তালিকা ছিল তার কাছে। তার তালিকার বাইরে যারা দরপত্র ক্রয় করেছেন, তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর চেয়েছিলেন তিনি। আমি চলে যাবার পর আমার দপ্তরের এক কর্মকর্তা সাথেও খারাপ আচরণ করেন তারা।'

তাদের পরিচয়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি তাদেরকে চিনি না। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিয়েছেন তারা। তাদের কারণেই দরপত্র অনেক কম বিক্রি হয়েছে।'

তবে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মতিহার থানা বিএনপির আহ্বায়ক একরাম আলী। তিনি বলেন, 'বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। অনেকে আমাদের দলের পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্মের চেষ্টা করে। তবে দলীয় না হয়ে দলের পরিচয় দিয়ে কেউ কোন অপকর্ম করলে তার দ্বায়ভার আমরা বহন করবো না।'

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. মতিয়ার রহমান বলেন, 'আমরা আগেই কিছুটা জানতে পেরেছিলাম কোন থার্ড পার্টি সিন্ডিকেট করে দরপত্রে ঝামেলা করছে। আজ (মঙ্গলবার) দরপত্রের বাক্স খুলে দেখা যায় ৪৩ টা দরপত্র জমা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে যদি আমরা আমাদের কাঙ্খিত দাম না পাই তাহলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করবো।'

মানবকণ্ঠ/এসআর