Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে এক নারীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারীকে জুতা দিয়েও পেটানো হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীর নাম জাহাঙ্গীর আলম মিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ অফিসে সিনিয়র বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নির্যাতনের শিকার নারী জাহাঙ্গীরের বাসায় (বিশমাইল ই-টাইপ স্টাফ কোয়ার্টার) ছোটা কাজ করতেন।

গত ২৪ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরের ক্যাম্পাসের বাসায় ওই নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলেও কয়েক দিন আগে এই ঘটনা বড় আকারে জানাজানি হয়। ভুক্তভোগী নারী গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান এই শ্লীলতাহানি ও মারধরের বিষয়ে মুখ খুলেছেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তিনি জাহাঙ্গীরের বাসায় ছোটা (খন্ডকালীন) কাজ করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি এলাকায় থাকেন তিনি। ওই দিন বকেয়া টাকা চাওয়ায় জাহাঙ্গীর, তার বড় মেয়ে ও স্ত্রী মিলে তাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর ওই নারীর গায়ে হাত তোলেন। স্ত্রী ও তালাকপ্রাপ্তা বড় মেয়ের সামনেই কাপড়চোপড় টেনে-হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলেন জাহাঙ্গীর। বাসার বেশ কিছু বাসিন্দার সামনেই জুতা দিয়ে পেটানো হয় ওই নারীকে।

ভুক্তভোগী আরও জানান, তাকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হয়েছে। গায়ের কাপড় এবং ওড়না শরীর থেকে টান দিয়ে ফেলে দিয়েছে। জাহাঙ্গীর জোরে জোরে কিল-ঘুষি ও চড় থাপ্পর মেরেছে। এক পর্যায়ে পাশের বাসার আন্টি আমাকে তার ঘরের ভেতরে নিয়ে দরজা দেন। তখন জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী-মেয়ে আন্টির ঘরের দরজা ভেঙে ফেলার মতো অবস্থা তৈরি করে ভেতরে ঢুকে আমাকে মারার চেষ্টা করে। ওই ঘরে ঢুকতে না পারলে হয়তো আমাকে মেরেই ফেলতো।

ওই নারী বলেন, ছেলে মানুষ হয়ে কেন মহিলার মানুষের গায়ে হাত তুললেন? এই কথা বলার পর আরও বেশি মারধর করে জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের সদস্যরা। শুধু আমার সাথে না, আরও কয়েকজন কাজের মেয়ের সাথে এই ব্যবহার করেছে। তাদের টাকাও দেয় নাই।

প্রশাসনের কাছে বিচার কেন চাননি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, ‘আমি তো বিচার চাই। কিন্তু ওই লোকের ভয়ে আমি কাউকে জানাইনি। বিচার দিলে সে আমাকে নাকি দেখে নেবে। তাহলে আমি কীভাবে বিচার দেব? তাছাড়া তার (জাহাঙ্গীরের) অফিসও চিনি না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ই-টাইপ কোয়ার্টারের একজন সিনিয়র বাসিন্দা মানবকণ্ঠকে বলেন, তিনি বহু বছর ধরে কোয়ার্টারে থাকেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের মতো উগ্র ও উশৃঙ্খল পরিবার জীবনেও দেখি নাই। সেদিন কাজের মহিলাকে যেভাবে মারধর করেছে, সেটি কোনো বিবেকবান মানুষ করতে পারে না। কাজের মেয়ের গায়ে হাত দেয় কীভাবে সেটাই মাথায় ধরে না।

এই ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরের মোবাইলে কল দিলে প্রথমে তার মেয়ে ধরেন। তার মেয়ে বলেন, আমাদের বাসায় কী ঘটেছে না ঘটেছে সেটি আপনি দেখার কে? এত সাহস কোত্থেকে আসে? সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও বাজে ব্যবহার করেন তিনি। 
এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরের সাথে কথা হয়। তিনি মোবাইলে বলেন, ওই মহিলার সাথে যদি খারাপ ব্যবহার করতাম তাহলে তো সে অভিযোগ দিত। আমার বিরুদ্ধে তো কোনো অভিযোগ নাই। তাছাড়া আমরা সে ধরনের পরিবারই না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ই-টাইপ কোয়ার্টার এলাকার আরেকজন সিনিয়র বাসিন্দা বলেন, এ ঘটনা তো সবাই জানে। আমি শুনেছি জাহাঙ্গীর নাকি ওই মহিলার গলা চেপে ধরে অনেক উঁচুতে তুলেছিল। কারও কারও কাছে নাকি বিচারও চেয়েছে ওই মহিলা। কিন্তু গরীবের বিচার দেবে কে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. শামসুল হক মৃধা বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এরকম কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। আপনি আমার অফিসে আসেন তারপর বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।