তিন মাফিয়ার আঁতুড়ঘর স্বদেশ প্রপার্টিজ, যেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সুবিধাভোগীরা মিলেমিশে একাকার। নিজ নিজ দলীয় আদর্শ ভুলে গিয়ে জাল-জালিয়াতি করে অন্যের জমি লিখে, প্রতারণাপূর্বক টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেডের নামে।
দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপটে অন্যের জমিতে জোরপূর্বক বালি ভরাট করে, কম দামে জমি লিখিয়ে নেয়াসহ জাল দলিলের মাধ্যমে সরকারি খাল, বিল, জলাশয় ও খাস জমি দখল করে প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অপকর্মের শেল্টারদাতা হিসাবে কাজ করেন ওয়াকিল উদ্দিন, গোল্ডেন মনির ও এম এ কাইয়ূম।
এলাকাবাসীর অভিযোগে রাজউকের শোকজ: স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেড কর্তৃক স্বর্ণালী আবাসন প্রকল্প নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪৪ ও ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত উত্তরখান মৌজার আর এস দাগ নম্বর ৬৬২২-৬৬৩৩-সহ কতিপয়, দক্ষিণখান মৌজার আর এস দাগ নম্বর ১৩৫৩০-১৩৫৪৬-সহ কতিপয়, বাউথার মৌজার আর এস দাগ নম্বর ২৮০-৩১১, ৬০১-৬৩৭-সহ কতিপয় এবং বরুয়া মৌজার আর এস দাগ নম্বর ১৬০৪-১৬১৬-সহ কতিপয় জমিতে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালি ভরাট করতে দেখা যায়।
এসব দাগের অধিকাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমি, মাছের ঘের এবং প্রাকৃতিক জলাধার। এছাড়া ভরাট করা জমির কিছু অংশ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-২০৩৫)-এ বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও ভরাট কাজ চালিয়ে যাওয়ায় রাজউক বরাবরে এলাকাবাসীর অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগে তারা জানান, উত্তরখান, বড়ুয়া দক্ষিণখান ও বাউথার মৌজায় বিদ্যমান কৃষিজমি, প্রাকৃতিক জলাধার অবৈধভাবে ভরাট করে স্বর্ণালী আবাসন প্রকল্পের করছে স্বদেশ প্রোপার্টিজ।
স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেড প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ ও রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ লঙ্ঘন করায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শাখার, উপনগর পরিকল্পনা বিদ-১ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লিখিত এলাকার ভরাট কাজ বন্ধ করতে গতকাল রবিবার (০৫/০১/২০২৫) কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ ও যথাযথ জবাব দাখিলের স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেড, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাহের টাওয়ার, প্লট নম্বও ১০ (৪র্থ তলা) গুলশান সার্কেল-২, ঢাকাকে নির্দেশ দেন। যার স্মারক নম্বর ২৫.৩৯.০০০০,০৩০.১৪.১৫২(অংশ-৩),২০১২- ১৭৫২(৫), তারিখ: ৩১/১২/২০২৪।
তিন মাফিয়া ওয়াকিল উদ্দিন, গোল্ডেন মনির ও কাইয়ূম কারা?
ওয়াকিল উদ্দিন: স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেড পরিচালক থেকে কোটিপতি ওয়াকিল উদ্দিন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন ইতিপূর্বে বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি, বৃহত্তর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি (১৯৭৪) এবং ছাত্রলীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য (১৯৬৯) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত জীবনে ওয়াকিল উদ্দিন স্বদেশ প্রপার্টিজ নামক একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত।
বিএনপি নেতা কামরুল এবং কাইয়ূম এই প্রতিষ্ঠান অংশীদার হিসেবে অনেকেই অভিযোগ করলেও ওয়াকিল উদ্দিন জানান, ২০০৯ সালে বিএনপি নেতা কামরুল এবং ২০১৪ সালে বিএনপি নেতা কাইয়ূম স্বদেশ প্রপার্টিজের শেয়ার বিক্রি করে দেন। তাই বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে বিএনপির কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতা নেই।
গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য মতে, ওয়াকিল উদ্দিন গুলশান থানা আওয়ামী লীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকাকালীন বসুন্ধরা সিটিতে ৫৪টি দোকান, যার দাম ১২ কোটি টাকা। বারিধারাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার ছয়টি বাড়ি। গাজীপুরে রয়েছে চার বিঘা জমি, যার দাম ৩০ লাখ টাকা। গুলশান ১ নম্বর মার্কেটে একটি দোকান রয়েছে, যার দাম ৬০ লাখ টাকা।
এছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে তার এক কোটি পঁচাত্তর লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে, যার বর্তমান মূল্য ৬ কোটি টাকা। পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ৫০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে, যার বর্তমান মূল্য ১ কোটি টাকা। স্বদেশ প্রপার্টিজের শেয়ার ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। কুড়িলে যমুনা পার্কের সঙ্গে আট কাঠা জমি রয়েছে। ওই জমির বর্তমান মূল্য ২ কোটি টাকা। নর্দা, জগন্নাথপুর, কালাচাঁদপুরে দুই বিঘা উঁচু জমি রয়েছে, যার মূল্যমান ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বসুন্ধরায় পাঁচ কাঠার দুটি প্লট রয়েছে, যার দাম দেড় কোটি টাকা। সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
গোল্ডেন মনির: স্বদেশ প্রপার্টিজের অন্যতম শেল্টারদাতা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সোনা চোরাচালানের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড গোল্ডেন মনির। নব্বইয়ের দশকে মনির ছিলেন গাউছিয়া মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী। পরে তিনি রাজধানীর মৌচাকের একটি ক্রোকারিজের দোকানে কাজ শুরু করেন। তখন ‘লাগেজ পার্টি’র একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর মনিরও লাগেজ ব্যবসায় যুক্ত হন। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে লাগেজে কাপড়, প্রসাধন, ইলেকট্রনিকস, মোবাইল ফোন, ঘড়ি, কম্পিউটারসামগ্রী আনা-নেয়া শুরু করেন। মূলত ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ভারত রুটে ছিল তার ব্যবসা। এই লাগেজ ব্যবসা করার সময় স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িয়ে পড়েন।
অবৈধভাবে দেশে নিয়ে আসেন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ। বায়তুল মোকাররম মার্কেটে তিনি একটি স্বর্ণের গহনার দোকানও দেন। চোরাচালানের স্বর্ণ ওই দোকান থেকে বিক্রি হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। চোরাচালানের দায়ে ২০০৭ সালে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা হয়।
রাজউক থেকে প্লট-সংক্রান্ত সরকারি নথি চুরি করে এবং অবৈধভাবে রাজউকের কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করে পূর্বাচল, বাড্ডা, নিকুঞ্জ, উত্তরা ও কেরানীগঞ্জে নামে-বেনামে অন্তত দুই শতাধিক প্লট নিজের দখলে নেন মনির। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ৩০টির বেশি প্লটের কথা স্বীকার করেছেন। রাজউকের ৭০টি ফ্ল্যাটের নথি নিয়ে গিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে হেফাজতে রাখায় ২০১৯ সালে মনিরের বিরুদ্ধে রাজউক কর্তৃপক্ষ মামলা করে। এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করায় তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলাও চলমান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনির জানান, ২০০১ সালে তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল তার। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভূমি জালিয়াতি শুরু করে দেন।
ভূমিদস্যুতা ও প্লট জালিয়াতির হোতা মনির নিজের বসবাসের জন্য মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্পে বানিয়েছেন ছয়তলা আলিশান বাড়ি। এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা মিলে ডুপ্লেক্সে তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। আর ওপরের তলাগুলো ভাড়া দেয়া ছিল। তবে করোনাকালে ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছাড়েন। এ কারণে পুরো ভবনে শুধু মনিরের পরিবারই ছিল।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত গোল্ডেন মনির। তার মধ্যে রয়েছে মনির বিল্ডার্স, গার্লস অটোকারস লিমিটেড, উত্তরার গ্র্যান্ড জমজম টাওয়ার ও স্বদেশ প্রপার্টিজের অন্যতম পরিচালক। জমজম টাওয়ারে মনিরের মালিকানার মূল্যমান প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বারিধারায় গোল্ডেন গিয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকান রয়েছে তার। বাড্ডার ১১ নম্বর সড়কে সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের দুটি এবং দুই কোটি টাকা দামের প্লট রয়েছে। এমনকি বাড্ডায় ১০ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা শপিং সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মনিরসহ চারজনের অংশীদারত্বে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। এর বাইরে কেরানীগঞ্জে প্রচুর জমিজমা ও প্লট আছে। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে মনিরের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য নেয়া হয়েছিল। নানা জালিয়াতির বিষয়ে প্রমাণ মেলার পর তাকে আইনের আওতায় নেয়া হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে, অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডে গ্র্যান্ড জমজম টাওয়ার এবং উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সাফা টাওয়ারের অন্যতম মালিক হন। ঢাকায় তার ৯০ কাঠার বিভিন্ন আয়তনের প্লট রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বাড্ডায় রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আড়াই কাঠার ১৯টি প্লট, রাজউক পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট, বারিধারা জে-ব্লকে সাড়ে আট কাঠা করে দুটি প্লট, খিলক্ষেতে পৌনে দুই কাঠার একটি প্লট, তুরাগের নলভোগ মৌজায় ১২ কাঠা জমি। এ ছাড়া গোল্ডেন মনিরের নামে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের চর রুহিতপুরে আড়াই বিঘা জমি রয়েছে। আবাসন প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রপার্টিজে (বাড্ডা) তার মালিকানা রয়েছে। চোরাকারবার করে হয়েছেন এসব সম্পত্তির মালিক।
এছাড়া গোল্ডেন মনিরের নামে ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭৯১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৩ টাকা পাওয়া গেছে। তিনি এই আয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের পরস্পর যোগসাজশে যৌথ ও একক নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছেন। তার মালিকানাধীন অটো কার সিলেকশন লিমিটেডের হিসাব থেকে রাজউক কর্মচারী বহুমুখী কল্যাণ সমিতির হিসাবে পাঁচ কোটি টাকা পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে।
বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্পে আড়াই কাঠা করে পাঁচটি প্লটে পাঁচটি ভবন নির্মাণ করে গোল্ডেন মনিরের স্ত্রী রওশন আরা তা ভোগদখল করছেন। অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির তার ছেলে রাফি হোসেনকে (২৪) কার অটো সেন্টারের মালিকানা দিয়েছেন। মনির হোসেনের দুই বোন ও দুই ভগ্নিপতি রাজউকের প্লটগুলো দেখাশোনা ও ভোগদখল করে আসছিলেন।
এম এ কাইয়ূম: অন্যদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বদেশ প্রপার্টিজ নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পাওয়ার চমকপ্রদ তথ্য। ২০১৮ সালের আগপর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ছিল না। প্রতিষ্ঠানের ফাইলটি রাজউক থেকে পাস করে গণপূর্তে পাঠানো হয়। কমিশনের টানাপড়েন নিয়ে ফাইলটা বেশ কিছুদিন ঝুলে ছিল। ফাইলটি পাস করাতে স্বদেশ প্রপার্টিজের অন্যতম মালিক সাবেক একজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকের শরণাপন্ন হন এম এ কাইয়ূম। তবে ফাইল পাস করাতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর ফাইলটি পাস করানোর দায়িত্ব বর্তায় গোল্ডেন মনিরের ওপর। কারণ মনির স্বদেশ প্রপার্টিজের প্রায় ২১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। বিএনপি সমর্থক সাবেক কাউন্সিলর এ কে এম কাইয়ূম কমিশনার স্বদেশ প্রপার্টিজের শেয়ার পুরোটাই মনিরের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এরপর বিদেশে পালিয়ে যান কাইয়ূম।
সূত্রমতে, ২০১৮ সালে স্বদেশের ফাইল পাসের দায়িত্ব পাওয়ার পর গণপূর্তের এক বড় কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মনির। এক পর্যায়ে তিনি তাকে ঘুষের প্রস্তাব দেন। পরে ফাইলটি পাস করার বিনিময়ে ২৫ লাখ টাকা ওই কর্মকর্তার বাসায় পৌঁছে দেন মনির।
জানা গেছে, একটি বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পূর্বাচলে বড় জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে। মূলত রাজউক থেকে যে কোটায় তারা ওই জায়গাটি বরাদ্দ নিতে চান, তা সাধারণত সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা। যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো জমি নেই, তারা এ রকম প্লট পেতে পারে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক প্লট হিসেবে ওই জায়গাটি পাইয়ে দিতে ওই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বাঁধেন গোল্ডেন মনির। সব টেবিলের কর্মকর্তারা একমত হলেও এক বড় কর্মকর্তা ওই প্লট বরাদ্দে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এরপর নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ওই কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন গোল্ডেন মনির। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালো চেয়ার পাইয়ে দেওয়া ও পদচ্যুত করতে নিজের প্রভাব ও অর্থ ব্যয় করতেন মনির। ওয়াকিল কাইয়ূম মনিরের যৌথ অপরাধের সাম্রাজ্যের শেষ কোথায় তা জানতে চায় স্থানীয় জনগণ। বিএনপির প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যবহার করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন ও বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলছেন এই ভূমিখেকো দখলদার এম এ কাইয়ূম। কাইয়ূমের দল বিক্রির তথ্য সম্পর্কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিনিয়র নেতারা অবগত রয়েছেন বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
কাইয়ূমের বাৎসরিক খরচের বিবরণ : ১৬৮ ধারার আয়কর আইন অনুযায়ী এম এ কাইয়ূমের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক খাদ্য বাবদ বার্ষিক খরচ ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যাতায়াত খরচ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বাৎসরিক বৈদ্যুতিক বিল ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা, ওয়াসার বিল ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা, গ্যাস বিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা, টেলিফোনের বিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। যা কাইয়ূমের উল্লিখিত কয়েকটি বাড়ির সংখ্যা, আকার, আয়তনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিদেশপড়ুয়া সন্তানদের বাৎসরিক শিক্ষার খরচ তিনি দেখিয়েছেন তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা বাংলাদেশের কোনো প্রাইভেট কলেজেও সম্ভব না। কাইয়ূমের ব্যক্তিগত ও বিদেশ ভ্রমণের বাৎসরিক খরচ দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যেখানে কাইয়ূমের স্বজনরা জানান, তার হাতের ঘড়ি এবং এক জোড়া শ্যুট-প্যান্ট ও জুতার মূল্য ২০ লাখ টাকার নিচে নয়।
হাজার কোটি টাকার সম্পদের হিসাব গোপন: স্বদেশ প্রপার্টিজের কর্ণধার এম এ কাইয়ূমের বেশুমার সম্পদের কথা কার না জানা? ঢাকার অভিজাত সব এলাকায় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। রয়েছে স্বদেশ প্রপার্টিজের মতো হাজার কোটি টাকার ব্যবসা, যা তিনি সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেননি। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে ২০২৩/২৪ অর্থবছরে মাত্র ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা ট্যাক্স দিয়েছেন তিনি।
এম এ কাইয়ূম (টিআইএন ২১৬৯৬৬২১৪১৩৯)-এর সম্পদের বিবরণীতে দেখা যায়, বনানীতে কিছু দোকান এবং তার মালিকানাধীন নাভিদ ট্রেডিং করপোরেশন, নাভীদ উল ওয়্যারস লিমিটেড, জেএকে ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড, টেকনো মাল্টিপারপাস কো-অপারেশন লিমিটেডে বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জন করে থাকেন অথচ হাজার হাজার কেটি টাকার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেড থেকে প্রাপ্ত আয়ের উল্লেখ নেই সরকারের কাছে প্রদেয় সম্পদের বিবরণীতে। যদিও স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেডের কোম্পানি মেমোরেন্ডামে তার অংশীদারীত্বের প্রমাণ মিলেছে।
Comments