সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের অনশন কর্মসূচি চলার মধ্যে ফের সড়ক অবরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কলেজের সামনের মহাখালী-গুলশান সড়ক অবরোধকালে দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীর।
আন্দোলনকারীদের নেতা নায়েক নূর মোহাম্মদ বলেন, শনিবার বিকাল ৪টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা না এলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক অবরোধ করব বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। এর অংশ হিসেবে এখন আমরা আপাতত ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তা বন্ধ করেছি। শিক্ষার্থীরা আসছে, পরে আমরা মহাখালী, গুলশানে রাস্তা এমনকি উত্তর সিটি করপোরেশনের এলাকার বিমানবন্দরের রাস্তাও বন্ধ করতে পারি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) থেকে লাগাতার এই কর্মসূচি চলবে। সড়ক ও রেলপথ এর আওতায় থাকবে। তবে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ব্যারিকেড কার্যক্রম শিথিল থাকবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে ৭ দফা কর্মসূচি মেনে নেওয়া হয়েছে এমন ঘোষণা আসতে হবে। যতক্ষণ এই ঘোষণা না আসবে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।
এদিকে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ যেন না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রতি জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এই তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার অবহিত। এ মর্মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো যাচ্ছে যে, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে এ কমিটি তিতুমীর কলেজসহ সাতটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এ কলেজগুলোর শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা ও মানোন্নয়নই বর্তমানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং এক্ষেত্রে করণীয় সব বিকল্পই সরকারের বিবেচনায় থাকবে। এ অবস্থায় তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। সেজন্য আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করা হলো। জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় বা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সর্বস্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার সবসময় সচেতন ও সহানুভূতিশীল রয়েছে বলেও জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে মন্ত্রণালয়ের এ বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাত ৮টায় ক্যাম্পাসের সামনে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘মুলা’ না ঝুলানোর আহ্বান জানায়।
অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মাহামুদুর রহমান মুক্তার বলেন, ‘আমরা আর ৭ দফা চায় না। এখন থেকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির একদফা দাবিতে অনশন ও বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা অনঢ় থাকব।’
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে আমরা প্রথমে মহাখালী পয়েন্ট, আর মাত্র গুলশান পয়েন্ট থেকে এলাম। প্রত্যেকটা পয়েন্টেই আমাদের মেসেজ ছিল আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের কথা শুনতে চায় না।’
আলোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ের ‘দায়িত্ববান’ কাউকে পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে মুক্তার বলেন, ‘দুইদিন আগে একজনকে পাঠিয়েছিলেন, তিনি এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন। শিক্ষার্থীদের স্পন্দন সম্পর্কে তার ধারণা নেই ‘
এদিকে শনিবার বিকেল ৪টার থেকে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে মহাখালী থেকে গুলশান-১ এলাকায় যাওয়ার সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই সড়কে চলাচলকারী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
তবে সাড়ে ৭টার দিকে গুলশান ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, তিতুমীর কলেজের শিক্ষাথীরা গুলশান-১ থেকে তিতুমীর কলেজের দিকে চলে গেছেন। যানচলাচল শুরু হয়েছে।
মানবকণ্ঠ/আরএইচটি
Comments