Image description

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা আদালতে জামিন নিতে গেলে তাঁদের অন্তত ১৫টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় ওই মামলার ৩ নম্বর আসামি মো. মাসুদকে (৩২) হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি পাহাড়পুর গ্রামের রমজান আলী শেখের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়পুর গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আহমেদের (কটা) সঙ্গে বিএনপির নেতা মো. লাল্টু ও তাঁদের সমর্থকদের বিরোধ চলছিল। এর মধ্যে ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় জমিজমা নিয়ে ওই গ্রামের মৃত হাকিম বিশ্বাসের দুই ছেলে মোতাহার হোসেনের সঙ্গে মুনতাজ হোসেনের বিরোধ দেখা দেয়। মুনতাজ লাল্টু গ্রুপের এবং মোতাহার কটা গ্রুপের সমর্থক। এ নিয়ে ওই দিন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ আহত হন।

ওই ঘটনার পরদিন ৯ অক্টোবর লাল্টু গ্রুপের মনোয়ার হোসেন ১৬ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দেন। আর ১৪ অক্টোবর কটা গ্রুপের রেজাউল করিম ১৯ জনকে আসামি করে এজাহার দিলে পুলিশ মামলাটি রুজু করেন। মামলার আসামিরা আজ আদালতে জামিন নিতে গেলে তাঁদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন বাদীপক্ষের লোকজন। আর কাজে যাওয়ার পথে ৩ নম্বর আসামিকে কুপিয়ে জখম করা হয়।

দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় পুরুষশূন্য গ্রামটি। উভয় পক্ষের বেশ কিছু বাড়ির বেড়া, রেফ্রিজারেটর, আসবাব ও বিদ্যুতের মিটার ভাঙচুর করা হয়েছে। গোয়ালঘরে গবাদিপশু নেই। গ্রামের মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল।

আতঙ্কে কেউ কেউ ঘরের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এ সময় লাল্টু গ্রুপের রিপন শেখ বলেন, ‘আমাদের পক্ষের লোকজন আদালতে জামিন নিতে গেছে। আর প্রতিপক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন এসে ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। সে জন্য আতঙ্কে আমার বাড়ির আসবাব সরিয়ে নিচ্ছি।’

একই গ্রুপের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী জোসনা খাতুন বলেন, স্বামী আদালতে জামিন নিতে গেছেন। সেই সুযোগে কটা গ্রুপের জিতু, মিজান, হাসানসহ ১৫ থেকে ২০ জন মিলে ঘরের আসবাব, রেফ্রিজারেটর ও কৃষি যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে চারটি বড় গরু ও চারটি ছাগল লুট করে নিয়ে গেছেন।

পাহাড়পুর জামে মসজিদের খাদেম আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি কোনো ঝুট ঝামেলায় থাকি না। শুধু লাল্টুর সমর্থক হওয়ায় আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে গরু লুট করেছে কটার লোকজন।’

স্বর্ণালংকার লুট ও আসবাব ভাঙচুরের ঘটনায় শোকাহত রাজবের স্ত্রী ডালিয়া খাতুন। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘পুলিশকে এতবার ফোন দিছি, তা-ও আসেনি। পুলিশের জন্য ওরা সব লুট করে নিয়েছে। পুলিশ টাকা খেয়ে কটার পক্ষ নিয়ে আমাদের ঘরবাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট করিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

লাল্টু গ্রুপের অন্যতম নেতা মোমিন শেখ বলেন, ‘আমরা আগে এজাহার দিয়েছি। তবুও মামলা নেয়নি পুলিশ। আর ওরা পরে এজাহার দিলেও পুলিশ মামলা নিয়েছে।’ তাঁর দাবি, পুলিশ টাকা খেয়ে প্রতিপক্ষের মামলা নিয়েছে। একটি মামলা হওয়ায় আজ হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

আহত মাসুদের বাবা রমজান বলেন, কাজে যাওয়ার সময় কটার নেতৃত্বে মারুফ, রিয়াজ, রবিবুলরা তাঁর ছেলেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছেন।

এদিকে হামলা ও লুটপাটের পর কটা গ্রুপের পুরুষেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। এ পক্ষের তরিকুলের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, ‘সেদিন প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের লোকজনকে মারধর করে বাড়িতে লুটপাট করেছে। সে জন্য আজ আমাদের লোকজন করেছে।’

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। তিনি বলেন, লাল্টু পক্ষের এজাহারে ত্রুটি থাকায় মামলা রুজু হতে দেরি হচ্ছে। সংশোধন করে মামলা নেওয়া হবে। এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস