Image description

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের দাবিতে ময়মনসিংহে শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ফেল করা শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের কারণে যানচলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

রোববার দুপুর থেকে শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান নিয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাদেরকে সেখানে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, সাবজেক্ট ম্যাপিং গড়মিল করে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। এসএসসির ফলাফল অনুযায়ী সব বিষয়ের ম্যাপিং করে বৈষম্যহীন ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

একই দাবিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গিয়েও বিক্ষোভ করেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীয় ফেল করা শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যমুক্ত ফলাফলের’ দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে তারা হামলার শিকার হন বলেও এ সময় অভিযোগ করেন। পরে তারা বোর্ড প্রাঙ্গণেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কারণে সন্ধ্যা ৬টাতেও বোর্ড কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।

এ ছাড়া ফেল করা শতাধিক শিক্ষার্থী পাসের দাবি নিয়ে দিনভর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের কারণে সেবা নিতে আসা শিক্ষক, বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েত হয়ে। একপর্যায়ে সেখানে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

রোববার বেলা ১১টায় নগরীর টাউন হল মোড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এইচএসসিতে অকৃতকার্য শতাধিক শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন। তারা কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে নগরীর কাঠগোলা এলাকায় শিক্ষা বোর্ডের কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা করেন।

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির ব্যানারে লেখা ছিল- বৈষম্যহীন রেজাল্ট চাই।

দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা বোর্ড ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষা বোর্ডের ফটকে পুলিশ অবস্থান নেয়।

শিক্ষার্থীরা ফলাফল বাতিল চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়কে ইট ফেলে ও রাস্তায় বসে অবরোধ করেন। এতে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে বিপাকে পড়েন পরিবহন চালক ও যাত্রীরা। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ পথে যানচালাচল বন্ধ ছিল।

দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. সফিউদ্দিন সেখ।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে অনড় থেকে জোরপূর্বক শিক্ষা বোর্ড ভবনের ফটকের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বোর্ড চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের আলোচনা করেন।

বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিল। সেদিনও তারা সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা চলার সময় যাত্রীদের বিষয় বিবেচনা করে পৌনে এক ঘণ্টা পর বেলা ১টা ১৫ মিনিটে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয় তারা।

তবে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাস্তা অবরোধ করে ফের আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। টায়ারে আগুন ধরিয়ে আন্দোলন করায় রাস্তার দুপাশে তীব্র যানজটে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাসিরাবাদ কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাফিউল করিম (রিসাত) বলেন, “এবারের ফলাফলে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গড়মিল করেছে। কোন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোন বিষয় ম্যাপিং করেছে তা বলতে পারেনি। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই অনেকে পাশ করেছেন।”

জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনিষা আক্তার বলেন, “আমি সব পরীক্ষায় অংশ নিলেও আমার ফলাফল আসেনি।”

ময়মনসিংহ গভর্মেন্ট কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার, আনন্দমোহন কলেজের কামরুন নাহার ইংরেজিতে ফেল করেছেন।

তাদের দাবি, ‘এ প্লাসের’ বদলে ফেল এসেছে। এটি কোনোভাবেই হতে পারে না। বোর্ডের ভুলে তাদের শিক্ষাজীবন নষ্ট হতে পারে না।

ফুলপুর উপজেলার বওলা ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম আইসিটিতে ও মোমেনশাহী ইসলামিয়া একাডেমি অ্যান্ড কলেজের সাজ্জাদ হোসেন ইংরেজিতে ফেল করেছেন।

তারা দুইজন বলেন, এবার মূল্যায়ণ সঠিকভাবে হয়নি। যে কারণে এ বিপর্যয়।

নগরীর মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবা আক্তার হিয়া আইসিটিতে অকৃতকার্য হয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমি ফেল করার মত পরীক্ষা দেইনি। কিন্তু ফেল দেখানো হয়েছে। এ ফলাফল আমরা মানি না। আজকের মধ্যে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”

আন্দোলনকারীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে পুনরায় এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের জন্য বেলা ৩টার দিকে আবেদন করেন।

এতে বলা হয়, ১৫ অক্টোবর যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং বৈষম্যযুক্ত।

আন্দোলনকারীরা তিনটি দাবি তুলে ধরেন। ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত ত্রুটিপূর্ণ এবং বৈষম্যযুক্ত ফলাফলকে বাতিল ঘোষণা করতে হবে। দেশের সব বোর্ডের সঙ্গে সমভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে পুনরায় বৈষম্যহীনভাবে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। ময়মনসিংহে সব বিষয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় সবাইকে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত করা হোক। সব শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট থেকে এইচএসসির সব সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হোক।

১৫ অক্টোবর ঘোষিত ফলাফল থেকে জানা যায়, চলতি বছর ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭৭ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৭ হাজার ৪৫৩ ও ছাত্রী ৪০ হাজার ১৬৮ জন। পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৯ হাজার ৬৯ জন; পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২।

এর মধ্যে ছাত্র পাস করেছেন ২২ হাজার ৯৩৫ জন এবং পাসের হার ৬১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর ছাত্রী পাস করেন ২৬ হাজার ১৩৪ জন এবং তাদের পাসের হার ৬৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

জিপিএ ৫ পাওয়া মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮২৬। তাদের মধ্যে ২ হাজার ১০৯ জন ছাত্র এবং ২ হাজার ৭১৭ জন ছাত্রী।

বোর্ডে বিগত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ম পাসের হার এবার। এ বছর আইসিটি ও ইংরেজি বিষয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয় বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, “শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপি আমরা আন্ত:বোর্ডে পাঠিয়ে দেব। শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষকদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তা আমরা দেখবো। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা পুনঃনিরীক্ষণ করব। আমরা সর্বোচ্চ সহমর্মী হয়েই এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী অটোপাশ দাবি করছে এটি আমাদের হাতে নেই।”রাত সাড়ে ৮টার দিকে চেয়ারম্যান বলেন, “এখন অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। কেউ কেউ আছেন। আমরা আশা করছি, ১০টার মধ্যে সেখান থেকে বের হতে পারব।”

মানবকণ্ঠ/এসআরএস