Image description

ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আর নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে।উপকূলবাসীর আশঙ্কা ঘূর্ণিঝড় ডানা আঘাত হানলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদ-নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেঙে যেতে পারে দুর্বল বেড়িবাঁধ। এজন্য উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার মানুষ।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ডানা মোকাবিলায় প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সভার আহ্বান করেছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।

সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে সাতক্ষীরায় দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখি যেতে বলা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা চলমান থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল রাতে উপকূলী এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ডানা। তবে সাতক্ষীরা এলাকায় কতটা আঘাত হানবে এটি এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৈখালী, গাবুরা, সোরা, লেবুবুনিয়া, নাপিতখালী, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

একইভাবে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী, চাকলা, বিছট, দয়ারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে কপোতাক্ষ নদের পানি কুড়িকাউনিয়া ও খোলপেটুয়া নদীর পানি হরিষখালী ও বিছট এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করায় এসব নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় ডানা আঘাত হানার শঙ্কায় ফের চিন্তিত হয়ে পড়েছে শ্যামনগর ও আশাশুনির ভাঙন কবলিত এসব এলাকার মানুষ।

শ্যামনগর উপজেলার সাবেক প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, উপকূলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। এলাকাবাসীর জোরালো দাবির পরও এখনো টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে দুর্যোগ এলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে উপকূলবাসীর।

শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুর এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ইয়াস ও রেমালের পর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় ফের ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, চারপাশে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত তার ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের গাবুরা, নাপিতখালী, জেলেখালী, তিন নম্বর পোল্ডারসহ বিভিন্ন এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাব হলে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, জোয়ারের সময় বাঁধের কানায় কানায় পানি ওঠে। ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এখানে কপোতাক্ষ নদের তীরে বেড়িবাঁধে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যেটা শেষ হলে ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। তবে এখনো পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ফের ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে তার ইউনিয়নের মানুষ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত গাবুরা ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মেগা প্রকল্পের আওতায় এনে কাজ শুরু করার দাবি জানাই।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন জেলায় ৬৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পয়েন্টের সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, আমার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। আপৎকালীন কাজের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া গোটা গাবুরা ইউনিয়নে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য মেগা প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দনের ২৬ নম্বর প্যাকেজের কাজ করার জন্য অদ্যাবধি কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আপাতত নদী ভাঙনের তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যেন ছাপিয়ে বাঁধের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য একাধিক টিম কাজ করছে। আর যেসব জায়গাতে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক সেখানেও সংস্কারের কাজ চলছে। এ ছাড়া আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও ফিল্টার, জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরা জেলায় ৩০৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টে দুই কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। শর্ট টেন্ডারের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ব্যাগ, ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর নজর রাখা হয়েছে। আমাদের লোকজন তাদের স্ব-স্ব এলাকায় কাজ করছেন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

সর্বশেষ সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এটি ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে। এ সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। যার ক্ষত এখনো শুকায়নি।