Image description

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের লেকে পাওয়া সাত টুকরো দেহটি ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন মাসুমের। তার সাথে এক নারীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল বলে বলছে পুলিশ। ২৮ বছর বয়সী ওই নারী ‘ক্ষোভের বশে তাকে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে হত্যার পর লাশ সাত টুকরো করে লেকে ফেলে দেন,’ বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

এর আগে দুপুরে ঢাকার শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাট থেকে রুমা আক্তার নামে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার রুমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানায়। অবিবাহিত এই নারী শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জসিমউদ্দিন মাসুমের পৈত্রিক বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায়। সেরা করদাতার পুরস্কার পাওয়া এ ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

এসপি প্রত্যুষ কুমার বলছেন, গ্রেপ্তার ওই নারীর ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত করতেন জসিম। ওই নারী জানতে পারে, আরেক নারীর সাথেও জসিমের সর্ম্পক রয়েছে। ‘এ কথা জানতে পেরে আবেগ ও ক্ষোভের বশে জসিম উদ্দিনকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে সাত টুকরো করে হত্যা করে। পরে সিএনজি ও উবার ভাড়া করে মরদেহ পূর্বাচলে ফেলে দেয়,’ বলেন নারায়ণঞ্জের পুলিশ সুপার।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫৯ বছর বয়সী এ ব্যবসায়ীর মালিকানায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি ডাইং কারখানা রয়েছে। গত ১০ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বের হন জসিম। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে স্ত্রীর সাথে সর্বশেষ কথা হয় জসিমের। রাতে না ফেরায় এবং পরদিন সকাল থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন নিহতের বড় ছেলে।

পরে ১৩ নভেম্বর দুপুরে পূর্বাচল উপশহরের একটি লেক থেকে তিনটি পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জসিমের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম সিহাব বলেন, ‘রোববার বিকেলে বাবা তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হইছিলেন। গুলশানে গাড়িটি ছেড়ে দেন এবং অন্য আরেকটি গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ যাবেন বলে ড্রাইভারকে জানান। এরপর রাত সাড়ে এগারোটায় মায়ের সাথে ফোনে বাবার কথা হয়। কিন্তু তিনি আর রাতে ফেরেননি। সকাল সাতটার দিকে তার দু’টো নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে আমরা থানায় জিডি করি।’

বুধবার রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, সকালে কাঞ্চন-কুড়িল সড়কের পাশে লেকের পানিতে হাত ধোয়ার সময় দুর্গন্ধ পান স্থানীয় এক রিকশাচালক। পরে তিনি স্থানীয় আরও কয়েকজনকে ডাক দিলে পলিথিনে মোড়ানো ব্যাগগুলো পান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে কালো রঙের তিনটি পৃথক পলিথিন ব্যাগে মরদেহের খন্ডাংশগুলো উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।

বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশ শনাক্ত করে নিহতের পরিবার। এর আগেই রূপগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, গ্রেপ্তার ওই নারী ‘প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, গত ১০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় নিজের ফ্ল্যাটে জসিমকে হত্যা করেন তিনি। তার দেয়া তথ্যমতে আমরা বনানীর একটি ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হ্যাকশ ব্লেইড, নিহতের পোশাক ও জুতো উদ্ধার করেছি।’

এই ঘটনায় ওই নারীর এক বান্ধবীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান এসপি।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস