প্রেমের টানে সৌদি প্রবাসী স্বামী ও দুই পুত্রসন্তান রেখে বিবাহিত আরেক পুরুষের ঘরে ঠাঁই নিয়ে অবশেষে ফিরলেন লাশ হয়ে। নির্মম এই ঘটনাটি ঘটেছে খাদিজা বেগম (৩৫) নামের এক নারীর সঙ্গে। তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত নারীর পরিবারের দাবি এটি হত্যাকাণ্ড।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্ত স্বামী মো. মোর্শেদ আলম ওই উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চকঢোষ গ্রামের মো. সাইফুল ইসলামের ছেলে।
মৃত খাদিজা বেগম ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইউসুফের মেয়ে।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে নিহতের বাবা মো. ইউসুফ বাদী হয়ে তার মেয়ের স্বামী মো. মোর্শেদ আলমকে প্রধান আসামি করে শ্বশুর ও ভাসুরের নাম উল্লেখ করে বোরহানউদ্দিন থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনার পর পরই পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান আসামিসহ এ মামলার অন্যান্য আসামিরা। মামলার পর শুক্রবার দুপুরে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।
খাদিজার স্বজনরা জানান, খাদিজা বেগমের প্রথম স্বামী ছিলেন একজন প্রবাসী, তাদের ১১ বছর ও ৭ বছর বয়সী দুটি পুত্রসন্তান রয়েছে। প্রবাসী স্বামীর অবর্তমানে প্রথমে পরিচয়, এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মোর্শেদের সঙ্গে। সর্বশেষ গত তিন বছর আগে প্রবাসী স্বামী ও তার সন্তানদের রেখে মোর্শেদ ফুঁসলিয়া নিয়ে যান খাদিজা বেগমকে। পরে তারা দুজন ধর্মীয় রীতিমতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিন বছরের সংসারে দেড় বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানও রয়েছে।
তারা আরও জানান, মোর্শেদের সঙ্গে খাদিজার বিবাহের কিছুদিন পার হলেই তাদের দাম্পত্য জীবন অশান্তি নেমে আসে। মোর্শেদ প্রতিনিয়ত খাদিজার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। এদিকে পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন করার ক্ষোভে খাদিজার সঙ্গে অনেকটাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তার পরিবার। এই সুযোগে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন দ্বিতীয় স্বামী মোর্শেদ।
স্বজনরা আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদিজাকে বেধড়ক মারধর করেন তার মোর্শেদ। বিকেলে প্রতিবেশীরা খাদিজা বেগমের ঘরের দরজা দীর্ঘক্ষণ বন্ধ দেখার পর সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থান খাদিজা বেগমের মরদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
খাদিজার বড় বোন হাসনা বেগম বলেন, গত পরশুদিন খাদিজা তাকে ফোনে বলেন, তার স্বামী তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালান। গতকাল রাতে আমার বোনের স্বামী মোর্শেদ আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘আপনার বোন মারা গেছে’। খবর পেয়ে আমরা ছুটে যাই সেখানে।
খাদিজার ভাই আব্দুর রহিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমার বোনের ওপর মোর্শেদ ও তার বাবা-ভাই মিলে নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। বোনের ওপর ক্ষোভের কারণে বিষয়টি নিয়ে আমরা চুপ করে ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমার বোনকে তার স্বামী মোর্শেদ ও তার বাবা-ভাই মিলে সু-পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে।
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments