Image description

গেল ১৫ বছর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এবং বর্তমানে বিএনপির ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের চকবাজারের ব্যবসায়ী শেখ আব্দুর রহিম ও শেখ মো. হানিফের বিরুদ্ধে। তারা আপন দুই ভাই এবং ভায়রাও। নগরীর পদ্মাবতীর মৃত শেখ আফসার উদ্দিনের ওই দুই ছেলে তাদের মৃত শেখ আব্দুর রহমানের স্ত্রী এবং তার সন্তানদের সম্পত্তি দখলে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে। 

গেল ৮ বছরের ব্যবধানে ১৬ বার পারিবারিক বৈঠক হলেও তারা তাদের সম্পত্তি বুঝিয়ে দেননি। এমনকি উপায়ন্তর না পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ভূমি কর্মকর্তার শরনাপন্ন হলেও আজ না কাল বলে ঘোরাঘুরি করছে। শেখ হানিফের বিরুদ্ধে রয়েছে তার ছোট ভাই মৃত শেখ মো. করিমের জমি জালজালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগও।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় চকবাজার এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী েশেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ছত্রছায়ায় ছিলেন রহিম ও হানিফ। বর্তমানে বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় যাওয়ার চেষ্টা চলছে। 

চকবাজারের ময়ূরী ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এর ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, কোতোয়ালী থানা সংলগ্ন ১১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পদ্মাবতীতে বসত বাড়ির জমি জোরপূর্বক দখলে রেখেছে ওই দুই ভাই এবং ভায়রা।

বিধবা দেলোয়ারা বেগম বলেন, বর্তমানে আমি শ্বশুরের পদ্মাবতীর বাড়ির দ্বিতীয়তলায় বসবাস করে আসছি। রহিম ও হানিফ থাকছেন তিনতলায়। কিন্তু তারা দ্বিতীয় তলার রান্নাঘর ও ডাইনিং ব্যবহার করছেন। এ নিয়ে বারবার তাদেরকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা তা মানছেন না। এ জন্য চারতলা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক হানিফকে আমার ছেলে শেখ জাহিদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে কোন কাজই করেননি তারা। আর টাকাও ফেরত দেননি। 

এখানেই শেষ নয়, শ্বশুড় মৃত্যুর পূর্বে ওয়ারিশগনের মধ্যে বসত ঘর থেকে শুরু করে ময়ূরী ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং থানা সংলগ্ন জমি ভাগ করে দিয়ে যান। কিন্তু আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ওই জমির ভাগ চাইলে টালবাহানা শুরু করে রহিম ও হানিফ। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে গেল আট বছরের ব্যবধানে ১৬ বারের বেশী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তারা ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্য সম্পত্তি বুঝে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। গত ৪৫ বছর ধরে ওই সকল সম্পত্তি ভোগ দখলে আছেন রহিম ও হানিফ। কোনভাবে ওয়ারিশের অংশ না পেয়ে তার ছেলে জাহিদ সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে পুলিশ এবং সেটেলমেন্টে অভিযোগ দেয়। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ভূমি কর্মকর্তার দরবারে একাধিকবার বৈঠক হয়। কিন্তু সেই সকল বৈঠকের সিদ্ধান্তও তারা মানছে না। 

দেলোয়ারা বেগম এবং তার ছেলে শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছর তারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে জমি দখলে রেখেছে। শেখ রহিম মাদারীপুরে আওয়ামী লীগ পরিবারে বিয়ে করেছেন। শেখ রহিমের স্ত্রীর আপন বোনকে বিয়ে করেছেন শেখ হানিফ। এ দুই ভায়রার শ্যালক হচ্ছেন মাদারীপুর যুবলীগ নেতা সাব্বির ভূঁইয়া। সাব্বির ছিলেন সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানের ডানহস্ত। 

২০২৩ সালে শেখ রহিমের ছেলে রাকিনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জমিজমা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে জাহিদের স্ত্রী কথা বললে সাব্বির সাথে সাথে তার কোমড় থেকে পিস্তল বের করেন। এরপর সকলেই চুপ হয়ে যান। এ নিয়ে পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে সেখানেও শেখ রহিম ও হানিফ শাহজাহান খানের ক্ষমতা ব্যবহার করেন। সম্প্রতি শেখ রহিম তার ছোট ছেলে রিয়নকে বিয়ে দিয়েছেন কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান খানের মেয়ের সাথে। 

ক্ষমতার পালা বদলে বর্তমানে শেখ রহিম পূর্বে বিএনপির সাথে যুক্ত থাকার ফয়দা লুটতে ব্যস্ত। আর এতে বাধ সাধেন সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চান। এ কারনে এবায়দুল হক চানের সাথে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এখন বিএনপিকে সামনে রেখে সকল জমিজমা দখলে রাখার পায়তায় ব্যস্ত রয়েছেন শেখ রহিম ও হানিফ। 

জাহিদ আরো বলেন, ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমি বুঝে না পাওয়ায় দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হওয়ার পর সেনাবাহিনীর কাছে তার বিধবা মা লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। একইভাবে সেনাবাহিনী নগরীর পোর্টরোডস্থ সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার সাথে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জমির ভেলুয়েশন দেয়ার জন্য বলা হয়। সেই ভেলুয়েশন ঠিকই দিয়েছেন। কিন্তু জমি বন্টনে তাকে বসতে বলা হলে তা নিয়ে তিনি টালবাহানা করছেন। 

কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসার পরও শেখ রহিম ও হানিফ আজ না কাল বলে কালক্ষেপন করে আসছেন। ওই সকল ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ জাহিদ। 

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চান বলেন, শেখ রহিম হচ্ছে সুবিধাবাদী দলের লোক। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মহানগর বিএনপি সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার মেয়র ও হুইপ থাকাকালীন শেখ রহিম বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ওই সময় সরোয়ারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শাহজাহান খান এবং সাদিক আব্দুল্লাহর ছত্রছায়ায় থেকে পুরোপুরি আওয়ামী লীগ বনে যান। 

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, শেখ রহিমকে ব্যবসায়ী হিসেবে চেনেন। কোনদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল কি না তা তার জানা নেই।  

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য শেখ রহিমের ব্যবহৃত মোবাইলে তিনবার কল দেয়া হলেও রিসিভ করেননি।