Image description

চট্টগ্রাম নগরের হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ এস এম আইয়ুবের মরদেহ স্ট্রেচারে করে হাসপাতাল থেকে বের করা হচ্ছে। চারপাশে আহাজারি করছেন স্বজন, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। এমন দৃশ্যের একটি ভিডিও শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষকের সঙ্গে স্মৃতি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। রসায়নের অধ্যাপক এস এম আইয়ুব (৫৯) হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। এরপর কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ থেকে তাঁকে জোর করে পদত্যাগ করানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শোক জানানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেতন কমানো, আইডি কার্ড প্রদান করাসহ চার দফা দাবিতে গত ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ করেন কলেজের একদল শিক্ষার্থী। ২৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগপত্র লিখে জোর করে তাঁকে সই করানো হয়। এরপর সেদিনই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৩৩ বছর ধরে ওই কলেজে শিক্ষকতা করা এই অধ্যাপক। সেদিনের পর থেকে আর কলেজে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেননি তিনি।

অধ্যাপক এস এম আইয়ুবের মৃত্যুর বিষয়ে তাঁর ভাগনে মোফাজ্জেল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ তাঁর মামা অসুস্থ বোধ করেন। পরে তাঁকে নগরের বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৃত্যু হয়েছে। তিনি স্ট্রোক করেন। মোফাজ্জেল হাসান বলেন, জোর করে পদত্যাগ করানোর বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এস এম আইয়ুব।

এস এম আইয়ুবের তিন ছেলে। সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। তাঁরা থাকেন নগরের মৌলভি পুকুরপাড় এলাকায়। গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীর ৬ নম্বর বৈলছড়ি ইউনিয়নে। মোফাজ্জেল হাসান জানান, গ্রামের বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হবে।

হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. শাহরিয়ার হাসান তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘ছাত্র হিসেবে আমরা লজ্জিত। আপনার এভাবে পরিণতি হবে চিন্তাও করতে পারলাম না। অপমান মেনে নিতে পারলেন না স্যার। শেষ পর্যন্ত না–ফেরার দেশে চলে গেলেন।’

সেলিম রানা নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘জটিল রসায়নকে স্যার অত্যন্ত সহজ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থাপন করতেন। এ কারণে স্যারের কাছে পড়েছি। স্যারের মৃত্যুতে শোকাহত।’

কলেজের অধ্যক্ষ চয়ন দাশ বলেন, এস এম আইয়ুবের কোনো রোগব্যাধি ছিল না। জোরপূর্বক পদত্যাগের ঘটনার পর আর কলেজের শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেননি। এর মধ্যে ১৮ নভেম্বর ডাকযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। সেখানে ব্যক্তিগত কারণ দেখান।

মানবকণ্ঠ/আরএইচটি