Image description

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি গ্রামের গৃহবধূ জাহানারা খাতুনের(৫২) জীবন যুদ্ধে কুমড়োর বড়ি তাঁর অস্ত্র হয়ে উঠেছে। নিরন্তর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি দারিদ্র্যকে পরাস্ত করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং এলাকার অনেক নারীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয় জাহানারাকে অনুসরণ করে এলাকার অনেক নারী কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। জাহানারা’র কুমড়ো বড়ির সুখ্যাতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

জাহানারা খাতুনের জীবন ছিল একসময় দারিদ্র্যের চাপে চূর্ণ। চার সন্তানের জননী হিসেবে সংসারের ভার তাঁর কাঁধে ছিল। দিনমজুর স্বামীর সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। তবে প্রায় ১৫ বছর আগে এক আত্মীয়ের পরামর্শে জাহানারা বাড়িতে কুমড়োর বড়ি তৈরি শুরু করেন। প্রথমদিকে ঢেঁকিতে ডাল গুঁড়ো করে, পাটায় বেটে এবং রোদে শুকিয়ে কুমড়োর বড়ি তৈরি করতেন। কিন্তু চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে হাতে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তিনি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ডাল গুঁড়ো করার এবং কুমড়োর বড়ি মিশ্রণ তৈরি করার দুটি মেশিন কিনেন। এখন তিনি মেশিনের সাহায্যে দ্রুত ও সহজে কুমড়োর বড়ি তৈরি করতে পারেন এবং বাজারে সরবরাহ করতে পারেন।

আজ জাহানারার তৈরি কুমড়োর বড়ি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয়। তিনি কেবল নিজের পরিবারকেই স্বাবলম্বী করেছেন তাই নয়, বরং অনেক নারীর কাছেও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।

জাহানারা খাতুন জানান, বর্তমানে তার কুমড়ো বড়ির কারখানায় ১৫ জন নারী শ্রমিক কাজ করছে। কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে তিনি চার ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এরমধ্যে তার বড় দুই ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে এবং ছোট ছেলে ও মেয়ে কলেজে পড়ছে। এছাড়াও তালগাছি গ্রামে ১২ শতক জায়গা কিনে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন এবং পাশাপাশি বাড়িতে করেছেন গরুর খামার।

ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী তার কারখানায় তৈরি ডালের বড়ি খ্যাতি লাভ করায় সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়তই জাহানারার কুমড়ো বড়ি কিনতে ভিড় করছেন তার কারখানায়। এছাড়াও প্রতি ৩ দিন পর পর তার উৎপাদিত কুমড়ো বড়ির বড় অংশ ঢাকার ব্যবসায়ীরা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন বলে তিনি জানান। 

আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ৬ মাস কুমড়ো বড়ির চাহিদা বেশী হওয়ায় কারখানায় ডালের বড়ি তৈরির ধুম পরে যায়।

কীভাবে তৈরি করেন ডালের বড়ি জানতে চাইলে তিনি জানান, ৫০ কেজি এ্যাংকর ডালের গুড়ার সাথে ৭/৮ কেজি চাল কুমড়োর মিশিয়ে মেশিনের সাহায্যে ফিনিশিং করা হয়। তারপর বাড়ির পাশেই বাৎসরিক ১৫ হাজার টাকায় প্রায় এক বিঘা জমি ভাড়া নিয়েছি। ওই জমিতে সারিসারি ঢেউ টিনের উপর বড়ি তৈরি করে শুকাতে দেয়। টানা ৩ দিন রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়।

প্রতিবেদককে তিনি  আরও বলেন, তিন হাজার টাকা মূল্যের ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা এ্যাংকর ডালে ৪৫ কেজি কুমড়ো বড়ি উৎপাদন হয়। বর্তমানে তার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ৭ বস্তা (প্রতি বস্তা ৫০ কেজি) এ্যাংকর ডাল ও এক বস্তা মাসকলাই ডালের কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে পারেন তিনি।

জাহানারা জানান, প্রতি কেজি এ্যাংকর ডালের কুমড়ো বড়ির উৎপাদন ব্যয় হয় প্রায় ৮৫ টাকা। তিনি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি বড়ি ১০৫ টাকায় দরে বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা ওই বড়ি বাজারে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। অন্যদিকে মাসকলাই ডালের দাম অনেক বেশী হওয়ায় এবং চাহিদা কম থাকায় তা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তার কারখানায় সারা বছরই কুমড়ো বড়ি তৈরি হয়। তবে শীতকালে বড়ির চাহিদা অনেক বেশী হওয়ায় ডালের বড়ি তৈরির কাজে তার কারখানায় ১৫ জন নারী শ্রমিকের পাশাপাশি তার স্বামী ও কলেজ পড়উয়া মেয়ে তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন।

এদিকে, কুমড়ো বড়ি কিনতে আসা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফাসহ ক্রেতারা জানান, জাহানারার কুমড়ো ডালের বড়ির গুণগত মান ও স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা অনেক বেশী।

অপরদিকে জাহানারা খাতুনের কুমড়ো ডালের বড়ির ব্যবসা চলমান রাখতে সহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান।

মানবকণ্ঠ/এসআর