Image description

দীর্ঘ তিন মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার অন্ধকার কাটিয়ে উঠে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, সমুদ্র সৈকত এবং অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির সঙ্গে মিলিত হওয়ায় গত সপ্তাহ থেকেই কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে ৯০% কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে যায়। ফলে অনেকেই বুকিং ছাড়াই এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকায় সবার নজর কেন্দ্রীভূত হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। ফলে পর্যটকদের ঢল নেমেছে সৈকতে।

পর্যটকদের এই অভূতপূর্ব আগমন পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছে। দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা। আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি সংখ্যক পর্যটক আসার আশায় তারা নানা আয়োজন করে রেখেছেন।

হোটল সাউথ বীচের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন জানান, আগামী  ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক সমাগম সমান থাকবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে  পুরো ডিসেম্বর পর্যন্ত  ৯০-৯৮ শতাংশ হোটেল রুম বুকিং হয়েছে। দীর্ঘদিন মন্দা যাওয়া পর্যটন ব্যবসায় সতেজতা এনেছে ডিসেম্বরের ছুটি। জানুয়ারীতেও কক্সবাজার আসতে আগাম বুকিং দিয়েছেন কিছু ভ্রমণপ্রেমী পরিবারে। চলতি মাসের ছুটিতে আমরা এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন করেছি। মৃত প্রায় পর্যটনে সতেজতা ফেরার কারণে সংশ্লিষ্টরা খুবই খুশি।

টুয়াকের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মিল্কি বলেন- কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস রয়েছে প্রায় পাঁচশত। এসব আবাসনে দৈনিক প্রায় ৩ লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে চাপ বেড়েছে হোটেলগুলো।

হোটেল সী-নাইটের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘টানা বন্ধে অতীতেও প্রায় প্রতিটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান কম-বেশি পর্যটক বুকিং দিয়ে এসেছেন । গত বৃহস্পতিবার হতে চারদিনের ছুটিতেও তেমনটি হচ্ছে। টানা ছুটি কাজে লাগানোর কারণে কলাতলির সবকটি হোটেল এখন ভরপুর। এধারা অব্যাহত থাকলে আন্দোলনের সময় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে আনা সম্ভব হবে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে টুরিস্ট পুলিশের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি ট্র্যাফিক পুলিশও মাঠে নিরলসভাবে কাজ করছে ধরনের যানজট এড়াতে। পর্যটকরা আমাদের প্রাণ। তাদের সেবা দিতে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পর্যটকরা নির্ভয়ে যাতে বেড়াতে পারে তার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সকল পক্ষের সাথে বসে আমরা নিয়েছি।

হোটেল টাইড ওয়াটারের ব্যবস্থাপক আনোয়ার শিকদার বলেন, কক্সবাজারকে নিয়ে  সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, সেভাবে পর্যটনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই। এরপরও দীর্ঘ সৈকত, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলায় কিছু পর্যটন স্পট থাকায় লোকজন আসেন। ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করা দরকার। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা পর্যটন ব্যবসাকে আরো চাঙ্গা করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে আসা শাহীনুল ইসলাম ও রিজিয়া আক্তার দম্পতি জানান- এবার আমরা রুম বুকিং দিয়ে এসেছি। অতীতে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখান থেকে সচেতন হয়ে এসেছি বলে রুম ভাড়া তেমন একটা পড়েনি। এখানে এসে রুম ভাড়া করলে দাম বেশি পড়ে এবং অনেক কষ্টে রুম জোগাড় করতে হয়। কক্সবাজারের প্রশাসন খুবই আন্তরিক এবং পরিকল্পনা করে মাঠে রয়েছে আমরা বুঝেছি।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি আবুল কালাম বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে নিরাপত্তার চাদরে আমরা ঢেকে রেখেছি শুধু পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য। আমাদের চিহ্নিত বিশেষ জায়গাগুলোতে আমরা টহলদারি নজরদারি এবং সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন রেখেছি। পর্যটকদের সহযোগিতা করতে টুরিস্ট পুলিশ সর্বদা সর্বদা পাশে আছে। বিশেষ এলাকার মধ্যে কলাতলী  সুগন্ধা পয়েন্ট, ইনানী বিচ,পাটোয়ারটেক,কাঁকড়া বিচ, টেকনাফ বিচ পর্যন্ত পুলিশরা সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নামানো হয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে অবস্থান ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুরো সৈকত নজরদারির আওতায় আছে। থাকবে যৌথ টহল, প্রশাসনের মোবাইল টিম, পেট্রোলিং রয়েছে টিমগুলো।’

ট্র্যাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো জসিম উদ্দিন চৌধুরী যানজট নিয়ন্ত্রণ ও পরিষেবা বৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন- আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে পুরো ডিসেম্বরের জন্য।  ১২ টি স্পটে আমাদের ট্র্যাফিক পুলিশ নিজস্ব পরিকল্পনায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। অতিরিক্ত পর্যটক চাপ সামলাতে এবং গাড়ির বিন্যাস সাজাতে আমরা উদ্যোগ গ্রহণের কারণে বেগ পেতে হচ্ছে না। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন- পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম নামানে হয়েছে । সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এডাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনদের আমরা দিকনির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি পর্যটকরা কক্সবাজারকে ভিন্নরূপে উপভোগ করবে নিরাপত্তায় - বিনা সংকোচে। অতিরিক্ত ভাড়া এবং খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের টিম।তিনি কক্সবাজারে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের শতভাগ নিরাপত্তা জোরদার করেছেন বলে নিশ্চিত করেন।

মানবকণ্ঠ/এসআর