Image description

‘দেড়শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও টিপ সই দিয়ে বাবা-ছেলেকে বিকেল ৫টার মধ্যে গ্রাম ত্যাগ করতে হবে। না ছাড়লে তোদের হাড়-মাংস খুঁজে পাওয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিতে পারবি না। তখন বলেছি, আমি মুক্তিযোদ্ধা, জীবন গেলেও বাড়ি ছাড়ব না। এ সময় জোর করে ওরা জুতার মালা পরিয়ে দেয়। পরে মান-ইজ্জতের ভয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হই। আমি উপদেষ্টা পরিষদের কাছে, দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে বিচার দিলাম।’ আজ সোমবার বিকেলে ফেনীর সাংবাদিকদের কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হেনস্তার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ভূঁইয়া কানু।  

তিনি আরও বলেন, ‘এ জুতার মালা আমার গলায় দেওয়া মানে দেশের গেজেটভুক্ত সব মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেওয়া।’

এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ভূঁইয়া কানুকে হেনস্থা করার ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পর দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ আসার পরই আজ সোমবার সকাল থেকে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।

ঘটনার পরই প্রাণ ভয়ে মুক্তিযোদ্ধা কানু এলাকা ছাড়েন। সোমবার রাতে তাঁর পরিবার জানিয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ভূঁইয়া কানু বর্তমানে ফেনীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

আগামী ২-১ দিনের মধ্যে এ ঘটনায় থানা মামলা করার কথা জানিয়েছেন কানুর ছেলে যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লব। তিনি বলেন, তার বাবার যে সম্মানহানি করা হয়েছে তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করেন। দলের ২ সমর্থককে বহিষ্কারের মধ্য দিয় আমাদের অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হল। 

এদিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরফাতুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশ জড়িতদের শনাক্ত এবং আটকের চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম চৌদ্দগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। 

এর আগে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের নিজ এলাকা কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করা হয়। জুতার মালা ও এলাকায় থেকে ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা  মুক্তিযোদ্ধার কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে এলাকা এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় ক্ষমা চেয়ে ও এলাকায় আসবেন বলে নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি ফেনীতে চলে যান। তার গ্রামের বাড়ি ঘটনাস্থলের অদূরে লুদিয়ারা গ্রামে। 

মানবকণ্ঠ/এসআরএস