১৭ মাসেই ৯০ কোটি টাকার সেতুতে লাইট অকেজো, চুরি-ডাকাতির আতঙ্ক!
কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও যদুবয়রা সংযোগকারী গড়াই নদীর ওপর নির্মিত ৬৫০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে ২০২৩ সালের ২৮ জুন। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুতে ৩৬টি আধুনিক লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু চালুর মাত্র ১৭ মাসের মধ্যেই সেতুটি আলোহীন হয়ে পড়েছে। ৩৬টি লাইটের মধ্যে মাত্র একটি লাইট কাজ করছে।
এই আলোহীনতার কারণে সেতুতে চলাচলকারী মানুষ চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে আতঙ্কিত। বিশেষ করে রাতের বেলায় সেতু পার হওয়া বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিটি লাইট স্থাপনের জন্য খুঁটি, তার, বাল্ব এবং শ্রমিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সেতু চালু হয়েছে প্রায় ১৭ মাস আগে। সেতু চালুর পর থেকেই একটি দুইটি করতে করতে ৩৫ টি লাইটই বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সেতুতে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে আজগর আলী (৪০) নামের এক চালককে সেতুর ওপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের আছির উদ্দিনের ছেলে। তারা দ্রুত লাইট জ্বালানোর দাবি জানান।
জেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গড়াই নদীর উপর চুক্তিমূল্য প্রায় ৮৯ কোটি ৯১ লাখ ব্যয়ে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল নেশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও রানা বিল্ডার্স লিমিটেড (যৌথভাবে)। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের ২৬ জুন কাজ শেষে হস্তান্তর করেন। ওই বছরের ২৮ জুন সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেতুর ৩৬ টি লাইট জ্বালাতে প্রতিমাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল গুণতে হয় সরকারকে। বরাদ্দ না থাকায় বিল বকেয়ার কারণে কয়েকমাস বন্ধ ছিল লাইট। তবে সম্প্রতি বিল পরিশোধ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু টেকনিকাল কারণে ৩৫ টি লাইট অকেজো হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গড়াই নদীর দক্ষিণপাশে পাঁচ ইউনিয়ন এবং উত্তরপাশে কুমারখালী পৌরসভা এবং আরো পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় ছয় লাখ মানুষের বসবাস। তারা নিত্য প্রয়োজন মেটাতে দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টা সেতু দিয়ে চলাচল করে। সেতুর লাইট গুলো অকেজো থাকায় তারা আতঙ্কিত।
রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দক্ষিণপাশে শুধু একটি লাইট জ্বলছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে চলাচল করছে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। বিনোদনের জন্য এসেছেন কেউ কেউ।
এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি বলেন, প্রতিদিনই শত শত মানুষ সেতুতে বিনোদনের জন্য আসেন। রাতে লাইট জ্বললে সেতুর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাই। দুর্ঘটনাও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাতে সেতুর ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। সেদিন একজনের ভ্যান ছিনতাই হয়েছে। এতে রাতে সেতুতে আসতে ভয় করে। তিনি লাইট গুলো জ্বালানোর দাবি জানান।
সেতু এলাকায় শীতকালে পিঠা বিক্রি করেন স্থানীয় ফিরোজা খাতুন। তিনি বলেন, গতবছর সেতুতে আলো জ্বলত। অনেকেই ঘুরতে আসত রাতে। এখন দেশের পরিবেশ খারাপ, সন্ধ্যার পর তেমন লোকজন থাকেনা। বেচাবিক্রিও কম এবার।
কেশবপুর গ্রামের ভ্যানচালক আজগরের স্ত্রী কাকলি খাতুনের ভাষ্য, সেতুতে লাইট জ্বললে সেদিন ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটতো না।
বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে লাইট বন্ধ ছিল কয়েকমাস। সেজন্য লাইট গুলো নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক প্রকৌশল আশিক আলী। তিনি ফোনে বলেন, প্রতিটি লাইটে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২৬ জুন কাজ শেষে সেতুটি হস্তান্তর করা হয়েছে। এক বছর পর্যন্ত মেরামতের সময় ছিল। সেসময়ও শেষ হয়েছে। এখন এলজিইডি দেখবেন বিষয়টি।
কুষ্টিয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বকেয়া বিল পরিশোধ করে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে টেকনিকাল কারণে মাত্র একটি লাইট জ্বলছে। অন্যান্য লাইট গুলো পরিবর্তন করে খুব দ্রুতই আলোর ব্যবস্থা করা হবে।
সেতুর লাইট বন্ধ থাকায় চলাচলকারীরা আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, সমস্যার সমাধানে ইতিমধ্যে এলজিইডির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অনিয়ম নাকি অবহেলা তা খতিয়ে দেখা হবে।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments