Image description

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘনবসতি এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠা ২৬টি ইটভাটার মধ্যে ১৮টিরই ইট পোড়ানোর সরকারি অনুমোদন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বিশেষ মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে ইটভাটা গুলো বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী খ্যাত ম্যানগ্রোভ বাগান উজার করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইট পোড়ানো এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারের দায়ে চলতি মৌসুমে ৬টি ইটভাটার জরিমানা নামমাত্র করা হলেও এর কোন প্রভাব পরেনি।  অভিযোগ আছে, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাদের‘ম্যানেজ’ করেই অবৈধ ইটভাটাগুলো বছরের পর বছর ধরে বীরদর্পে অপকর্ম করেই যাচ্ছে । অবৈধ ইটভাটার দাপটে উজার হচ্ছে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী পাশাপাশি ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। উজার হচ্ছে ফসলি জমি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গড়ে উঠা ২৬টি ইটভাটার মধ্যে ৮টির অনুমোদন রয়েছে। বাকি ১৮টি ইটভাটার কোনো অনুমোদন নেই। এসব ইটভাটাগুলো জিগজ্যাগ দাবি করলেও নেই ইট পোড়ানোর অনুমতি বা লাইসেন্স। অপরদিকে ১৮টি ইটভাটায় ৩০/৪০ ফুট ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরে নাম মাত্র আবেদন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ধুম চলছে। অনুমোদিত ৮টি ইটভাটা ছাড়া বাকি ভাটাগুলোর কোনোটিই নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে না। জ্বালানী হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটাগুলি সবই স্থাপিত হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কৃষি জমি এবং ম্যানগ্রোভ বাগানের নিকটবর্তী স্থানে। এসব ইটভায় ইট তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে সাবাড় হচ্ছে ফসলি জমি। বেশিরভাগ ভাটাগুলো লোকালয়ে অবস্থিত হওয়ায় এবং ব্যারেল চিমনি ব্যবহার করায় ওই সব এলাকার পরিবেশও দূষণ হচ্ছে।

সরেজমিনে শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম এওয়াজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যাঅ, নিউ পদ্মা নামের একটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে ঘনবসতি এলাকায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ১২০ ফুট চিমনি থাকার কথা থাকলেও ৩০/৪০ ফুটের চিমনির চুল্লি দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এছাড়াও ওই ভাটাটি কৃষি জমিতে গড়ে উঠায় কৃষকের ফসলি জমি কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। এতে উজার হচ্ছে ফসলি কৃষি জমি। পাশাপাশি ভাটার চুল্লির ফুলকিতে পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল ও ভাটা সংলগ্ন মানুষের বাড়ির গাছ গাছালি। ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা গড়ে উঠায় বিপাকে পড়েছেন ওই গ্রামের কয়েকশ পরিবার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটা মালিকরা জানান,নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভাটায় ইট পোড়ানোর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত ১ চিমনির একটি ভাটায় এক মৌসুমে ২৭ থেকে ২৮ লাখ ইট তৈরি হয়। আর দুই চিমনির ভাটায় এক মৌসুমে ৫০ লাখ পর্যন্ত ইট তৈরি করা সম্ভব। এক লাখ ইট তৈরিতে কাঁঠ লাগে ২ হাজার মণ। সেই হিসেব অনুযায়ী উপজেলার ইটভাটাগুলোতে কোটি কোটি মণ কাঠ পোড়ানো হয়। তবে প্রকৃত হিসেব এর চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা যায়। ইটভাটা মালিকেরা কয়েক দফা আবেদন করলেও পরিবেশ আইন বহির্ভূত বিধায় অনেক ইটভাটায় অনুমোদন নিতে পারেননি বলেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘনবসতি এলাকার মধ্যে ইটভাটাগুলো স্থাপিত হওয়ায়  বসতবাড়ির গাছগাছালি পুড়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আবাদি ফসল ও খামার।  ইট তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। এতে সংকটে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে।

ভোলা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. তোতা মিয়া জানান, ইতিমধ্যে চরফ্যাসনের ৬ টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

চরফ্যাশন উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সালাম হোসেন জানান,আমার জানা মতে ম্যানগ্রোভ বাগানের কাঠে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে এমন খবর পাইনি। তবে বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি জানান,ঘনবসতি এলাকায় ইট পোড়ানোর কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি ইটভাটার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ ইটভাটার তালিকা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

মানবকণ্ঠ/এসআর