সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এসব দুর্যোগে অনেক পরিবার তাদের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। তবে এ অঞ্চলের নারীরা ছাগল- ভেড়া পালন এবং বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষ করে পরিবারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার লবণাক্ত মাটি ও পানির কারণে এখানকার পুরুষরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইটভাটায় শ্রমিক, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা বা শহরে রিকশা চালানোর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে পরিবারের নারীরা অনেক সময়ই প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য পুরুষদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তবে দিন বদলের এই সময়ে নারীরা পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে
সরাসরি ভূমিকা রাখছেন।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের রুরাইরবিল ও হিজলিয়া এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম পাতাখালী, উত্তর ঝাঁপা ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কুলতলি ও সরদারপাড়া গ্রামের ১৮১টি পরিবারে ছাগল-ভেড়াও মৌসুমি সবজির বীজ একটি বেসরকারি সংস্থার থেকে সরবরাহ করা হয়। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের পদ্ধতিও শেখেন নারীরা।
মুন্সিগঞ্জের কুলতলি গ্রামের অঞ্জনা দাস বলেন, ‘স্বামীর উপার্জনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলাম। এই প্রকল্পের সহায়তায় বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ শুরু করি। প্রথমবারের ফলন ভালো হওয়ায় নিজেরা খাওয়ার পর বাজারে বিক্রি করে ১০-১২হাজার টাকা আয় করেছি। এখন শীত মৌসুমে বড় পরিসরে চাষ করছি। সংসারে স্বামীর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে পারছি।’
পদ্মপুকুরের সবিতা রানী জানান, ‘আগে স্বামীর আয়ে পুরো সংসার চলতো। জীবিকার জন্য নদীতে চিংড়ি পোনা ধরতে হতো, যা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এখন সবজি চাষ ও ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছি। নিজের প্রয়োজন নিজেই মেটাতে পারি।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রুণা সরকার জানান, নারীরা আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের নদীতে কাজ করতেন। এখন তারা বাড়ির ফাঁকা জায়গায় সবজি চাষ করছেন, যা তাদের পরিবারকে স্বচ্ছল করছে। শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, লবণাক্ত এলাকায় উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি বীজ সংগ্রহ করে নারীরা। আমরাও ইতিমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদের জন্য নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
শ্যামনগর উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের উপ-সহকারী মাহবুবুর রহমান বলেন, শ্যামনগর উপজেলাজুড়ে আধুনিক পদ্ধতিতে প্রাণিসম্পদ পালনের প্রশিক্ষণ ও টিকা সরকারিভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments