কুমিল্লার মুরাদনগরে একদিনের ব্যবধানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাল্টা কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এখন রাজনীতির মাঠে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাল্টা কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি জেলা থেকে অনুমোদিত কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে রবিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিদ্রোহী নেতারা।
প্রথম পক্ষের দাবি প্রকৃত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের কাজের গতি রোধ করতে ও রাজনৈতিক মাঠে প্রশাসনিকভাবে বিএনপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে ছাত্রদলের ছত্রছায়ায় বিদ্রোহী এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
অপরদিকে দ্বিতীয় পক্ষ বলছে, মুরাদনগর উপজেলার রাজনৈতিক মাঠে নিজের অবস্থান মজবুত করতে স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূইয়া জেলার নেতাদেরকে দিয়ে ওই কমিটি ঘোষণা করেছেন। আর এই কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের সাথে করা হয়েছে বৈষম্য। প্রকৃত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে বাদ দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসদেরকে রাখা হয়েছে সেই কমিটিতে। তাই নিজেদের অধিকার রক্ষায় বিদ্রোহী এই কমিটি ঘোষণা করেছে তারা।
দুই পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও কর্মসূচির ফলে রাজনৈতিক মাঠে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অন্য শিক্ষার্থীরা বলছে, এভাবে চলতে থাকলে যে কোন মুহূর্তে দুপক্ষের মধ্যে ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা।
জানা যায়, গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) মো. উবাইদুল হক ছিদ্দিকীকে মুরাদনগর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক করে কুমিল্লা জেলা বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক ও সদস্য সচিব এর স্বাক্ষরিত ৬০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরের দিন শনিবার বিকেলে পূর্বের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা আবদুর রহমান উজ্জ্বল নিজে আহ্বায়ক হয়ে ২৯৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন।
পাল্টা কমিটি ঘোষণার পর একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহী কমিটির নেতারা। জেলা থেকে অনুমোদিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে রবিবার বিকেলে মুরাদনগর উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিদ্রোহী কমিটির সদস্যরা।
উবাইদুল হক ছিদ্দিকী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার নেতৃবৃন্দ প্রকৃত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যাচাই-বাছাই করে ৬০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। তবে কোন একটি রাজনৈতিক মহলের ইন্ধনে আমাদের কমিটিতে থাকা কিছু সংখ্যক সদস্য জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই পাল্টা একটি কমিটি ঘোষণা দিয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। তারা যদি তাদের পক্ষ থেকে ওই অবৈধ কমিটির কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়, তাহলে অবশ্যই আমাদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুরাদনগর উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোঃ আরাফাত বলেন, আমাদের কমিটি জেলা কমিটির অনুমোদনপ্রাপ্ত। একটি স্বার্থন্বেষী মহল ছাত্রদলের ছাত্রছায়ায় বিএনপিকে প্রশাসনিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দিতে এই বিদ্রোহী কমিটি ঘোষণা করেছে। সেখানে অধিকাংশ সদস্যরাই ছাত্রদলের কার্যক্রমের সাথে জড়িত।
বিদ্রোহী কমিটির মুরাদনগর উপজেলা শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবদুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেয়েছি স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূইয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। এতে আমরা আনন্দিতই ছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে হঠাৎ করে জনাব আসিফ মাহমুদ ভুঁইয়ার কার্যক্রমে আমাদের মনে হচ্ছে তিনি মনে হয় আমাদেরকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাইতো তার রাজনৈতিক মাঠ মজবুত করতে জেলার নেতৃবৃন্দদেরকে দিয়ে একটি একপেশী কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণাকৃত কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ছিলো। সেখানে জায়গা পায়নি প্রকৃত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও ৫ই আগস্টের পর আমরা যারা প্রকৃত আন্দোলনকারী ছিলাম তাদের সাথে পরামর্শ করে মুরাদনগর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতো। শুধুমাত্র আমাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার ফলে সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি করে দেয়া হয় এবং আসিফ মাহমুদ ভূইয়ার পক্ষ থেকে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয় আমাদের সাথে কোন প্রকার সমন্বয় না করতে। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে মাঠে আছি থাকবো ইনশাল্লাহ।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব রুবেল বলেন, আমাদের প্ল্যাটফর্মে সকলেরই কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কারো প্ররোচনা বা কারো নির্দেশে কোন কমিটি দেয়া হয়নি। যদি কেউ মনে করে কমিটি থেকে বঞ্চিত হয়েছে তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে সকলকে সাথে নিয়ে চলার চেষ্টা করব।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মুরাদনগর উপজেলায় আমার কোন বন্ধু নেই কোন দুশমন নেই। আমার কাছে সবাই সমান। আমি আমার কাজের পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব সবাইকে সময় দেয়ার চেষ্টা করি। কেউ যদি বলে আমি কাউকে সুবিধা দিচ্ছি কাউকে দিচ্ছি না তাহলে এটা ভিত্তিহীন।
মানবকণ্ঠ/এসআর
Comments