Image description

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন, লবণ চাষের জন্য বহুকাল ধরে বিখ্যাত। তবে বর্তমানে এই উপকূলীয় এলাকার গোদারপাড়া, পশ্চিম উজানটিয়া মিয়ারপাড়া এবং করিয়ারদিয়া দ্বীপে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। বিশাল লবণের মাঠের মাঝখানে হলুদ-সবুজ রঙের এক বিস্তীর্ণ খেত। এই খেতটি লবণের মাঠ থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে অবস্থিত। লবণাক্ত মাটিতে এই ধরনের চাষাবাদ স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত মাটিতে প্রথমবারের মতো বিনা-১৪ সরিষা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয় কৃষক ওসমান ও রশিদ। এই সাফল্যে স্থানীয় কৃষি দপ্তরও খুশি।

সিনিয়র উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুর রহমান বলেন, যে মাটিতে লবণ চাষ হতো,তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় সেখানে আমরা চাষিদের নানা সহায়তার মাধ্যমে এই সরিষা চাষ করেছি। আমাদের কঠোর পরিশ্রমে এই প্রথম সরিষার চাষ করেছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ফসল হয়েছে।ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আরো উদ্যোক্তা নিয়ে বেশি সরিষা চাষ করব।

উপসহকারী কৃষি অফিসার জনাব মিসবাহ উদ্দিন আরেফী বলেন, অত্র এলাকায় প্রথমবারের মতো বারি সরিষা-১৪ ও প্রণোদনা সরিষা চাষের উদ্যোগ নিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। লবণাক্ত এলাকায় এটি আমার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা, যা আমি অত্যন্ত আগ্রহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু করেছি। আমাকে মাস্টার মুফিজুর রহমান, জনাব ডাক্তার রহমত উল্লাহ, নুরুল কায়েস ও কাজী আজিজসহ সকল কৃষক সহযোগিতা করেছেন। সবার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। আমাদের এলাকায় সরিষা চাষে সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। বিশেষ করে তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে। প্রথমবার হওয়ায় কৃষকদের অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে , যা ভবিষ্যতে আরও সফল হতে সহায়তা করবে। আমি আশা করি, সঠিক পরিশ্রম ও যত্নের মাধ্যমে একটি ভালো ফলন পাব এবং এই উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে। সবার সহযোগিতা এবং কৃষকদের আন্তরিকতা বহাল থাকলে এটি সরিষা গ্রাম হিসেবে খ্যাতি লাভ করবে।

পরিবেশ কর্মী হুমায়ুন কবির  জানান, স্বল্প খরচে বিনা ১৪ সরিষা আবাদের এই সাফল্য দেশের গোটা উপকূলে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। এতে করে একদিন ভোজ্য তেলের যেমন চাহিদা মেটাবে, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চল। বিশেষ করে জেলার পেকুয়া উপজেলা, কুতুবদিয়া-মহেশখালী, চকরিয়া উপজেলায় লবণ পানির আগ্রাসন, ঘন ঘন দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানকার মানুষের অন্যতম আয়ের উৎস লবণ চাষ ও লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ। এর মধ্যে জেলার পেকুয়া উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এরপর বর্ষাকালে লবণ পানি দিয়ে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে মৎস্য চাষ হয়।

মাতামুহুরী নদী ও কুতুবদিয়া চ্যানেল ঘেঁষা পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালি এবং পেকুয়া সদর ইউনিয়নে অনেক লবণাক্তপ্রবণ। এই এলাকায় মৎস্য চাষিরা নভেম্বর মাসের দিকে ঘের শুকিয়ে ফেলেন। এরপর ৫-৬ মাস পর্যন্ত লবণ চাষ শুরু করেন লবণ চাষীরা। কিন্তু লবণ চাষ শেষে মার্চ -এপ্রিল  মাসে ফের মৎস্য চাষ শুরু করেন তাঁরা। তীব্র লবণাক্ততা জমিতে এই প্রথম  সরিষা চাষ করে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন উজানটিয়া ইউনিয়নের গোদারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ওসমান(৪০), পশ্চিম উজানটিয়া এলাকার  রহমত উল্লাহ, আজিজ উল্লাহসহ ৪০ জন চাষি। 

সরিষা চাষি মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে লবণ চাষ ও মৎস্য ঘের করছি। কিন্তু  দুই বছর ধরে মিটা পানি দিয়ে ধান চাষ করতেছি। এই বছর কৃষি কর্মকর্তা শামসুর রহমান এর পরামর্শে এই জমিতে প্রথমবার সরিষার চাষ করেছি। লবণাক্ত মাটি হওয়ায় অন্য চাষের চেয়ে সরিষা কম হয়েছে। তবে ইনশাআল্লাহ আগামী বছর থেকে সরিষার ফলন ভালো হবে।

রহমত উল্লাহ  বলেন, এই লবণাক্ত  মাটিতে আমি লবণ চাষ করতাম,আমাদের চারপাশে শুধু লবণের পানি আর লবণ চাষ হচ্ছে। সরকার আমাদের একটা গভীর নলকূপ দিয়েছে।কৃষি কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দীনের পরামর্শে এই নলকূপের পানি দিয়ে আমরা সরিষার চাষ করেছি।আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো চাষ হয়েছে। আমরা অনেক খুশি হয়েছি। আগামী বছর আবারো এই সরিষা চাষ করব।

পেকুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো: রাসেল বলেন, পেকুয়া উপজেলার মধ্যে বেশি লবণাক্ত ইউনিয়ন উজানটিয়া।এই ইউনিয়নে এই বছর আমরা তেল ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ৪০জন  কৃষককে ৪০ একর জমির জন্য বীজ দিয়েছি, আর রাজস্ব আওতায় সার, কীটনাশক দিয়েছি এই কৃষকদের। সরিষার ফলনের উত্তম মাস হলো অক্টোবর শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। বলতে গেলে আমন আর ব্যুরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে চাষ করা হয় সরিষা।যত বেশি শীত পড়বে যতবেশি সরিষা ফলন ভালো হবে।সরিষা সময় ৬৫-৭০ দিন।সরকার তেল উৎপাদনের জন্য এই প্রকল্প নিয়েছেন।আলহামদুলিল্লাহ অনেকের ফলন ভাল হয়েছে। 

মানবকণ্ঠ/এসআর