Image description

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চলতি মৌসুমে অস্বাভাবিকভাবে ফুলকপির দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার চাষিরা। প্রতি পিস ফুল কপির উৎপাদন খরচ যেখানে ১০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, সেখানে তাদের এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৩ টাকায়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় পৌর সদরসহ ১৩ ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম কমে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে বাজারে ফুলকপির সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। অনেক চাষি বাধ্য হয়ে লোকসানের মুখে ফুলকপি বিক্রি করছেন। যদি যথাযথ ব্যবস্থা থাকতো, তবে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন বলে জানান তারা।

ফুলকপি চাষিরা জানান, গত বছরগুলোতে ফুলকপি চাষে লাভবান হওয়ায় এ বছর তারা ব্যাপক আবাদ করেছেন। শীতের শুরুতে আগাম ফুলকপি বিক্রি করে বেশ ভালো লাভও করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ফুলকপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে তা নেমে এসেছে দুই থেকে তিন টাকায়। কিন্তু বর্তমানে কপি উৎপাদনের ভরা মৌসুম, যেখানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেছে। ফলে কপির দাম কমে গেছে। পাইকাররা অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে আগের মতো দাম দিয়ে কপি কিনছেন না।

তারা আরও জানান, প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার চারা, ৩ হাজার টাকা হালচাষ, ৩ হাজার টাকা দিনমজুর, সার ও কীটনাশকের জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকা, আর জমির মালিককে বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লিজ মূল্য দিতে হয়। মোট খরচের তুলনায়, ফুলকপি বিক্রি করতেগিয়ে ব্যাপক লোকসানের মুখে পরতে হচ্ছে।

পুরাণ টেপরী গ্রামের কৃষক খোদা বক্স জানান, তিনি গত বছর ফুলকপি চাষে ভালো লাভ করেছিলেন, তাই এবছর দুই বিঘা জমিতে কপি চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালোই হয়েছে। দাম না থাকায় জমির কপি এখন জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। বিক্রি করতে পারছেন না, এবং কিছু কপি তিনি গরুক খাওয়াচ্ছেন।

গারাদহ গ্রামের মকবুল হোসেন জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। বর্তমানে তাকে প্রতি পিস কপি ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এক ঝাঁকা প্রায় ৫০ কেজি ফুল কপি বাজারে নিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি করতে হয়। অথচ এক বিঘা জমিতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন তিনি লোকশানের মুখে পড়েছেন।

চর নবীপুর গ্রামের কৃষক মোমিন হাজী বলেন, আমার দুই বিঘা জমির কপি বিক্রির উপযোগী হলেও সেগুলো বিক্রি করতে পারছি না। কামলা খরচ ও ভ্যান ভাড়া দিয়ে আড়ত পর্যন্ত নেওয়ার খরচেও কপি বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে আগাম ফলন ফলাতে পারেননি কৃষকরা। ফলে এক সাথে সকল জমিতে ফুল কপি ফলন হওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে গেছে। যার কারণে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকেরা কিছুটা সমস্যার মুখে পড়েছেন। তারপরও প্রতি বিঘা জমিতে কৃষক খরচ বাদে ফুলকপিথেকে গড়ে ৬০-৭০ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

আগাম, মধ্যম ও নামী জাতের ফুলকপি চাষ করলে এমন সমস্যা এড়ানো যেত বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

মানবকণ্ঠ/এসআর