
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ভূইয়াার উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে অভিযুক্ত শামীম ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। এতে তিনি বাধ্য হয়ে নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র প্রদর্শন করে জীবন বাঁচিয়েছেন বলে দাবি করেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা। অবশেষে সেই ঘটনায় ভুল স্বীকার করে অভিযুক্ত শামীম তার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ক্ষমা চাওয়ার বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনার ভিডিও’তে দেখা গেছে। অভিযুক্ত শামীম আহমেদ ক্ষমা চেয়ে বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি যে ঘটনা ঘটেছে বা মিডিয়াতে যে ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে তা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। ওনার সাথে আমাদের একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। এটা আমরা সংশোধন করে নিয়েছি। এরপর আরেক ভিডিও তে দেখা যায়, ‘ অভিযুক্ত শামীম তার কাছে ওই ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর হারুন অর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, শামীম তার এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এসে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। শনিবার রাতে এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে শামীম আমার বাড়িতে এসে মাফ চেয়ে গেছে। আর মিডিয়াতে যেগুলো প্রচার হয়েছে এগুলো ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে বলে সে জানিয়েছে। আর গুলি করার মিথ্যাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।
হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন (বুধবার) আমাকে অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী বানাতে তারা ঘটনার এক অংশের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেনি। সেদিন আমার ক্রয়কৃত জমিটির কাগজ দেখতে চেয়েছিল সার্বেয়ার মিজানুর রহমান। তাই ঘটনার দিন আমি সেখানে আমার গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে তিনি তার ফিল্ড সার্বেয়ারকে ডাকেন। ওই সময় এলাকার ভূমিদস্যু শামীম তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার ওপরে অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের কিল ঘুষিতে আমি আঘাত প্রাপ্ত হই। চোখের নিচেও কালো দাগ হয়ে গেছে। সেখান থেকে আমি পড়ে গেলে তারা আরও মারধর করে। এক পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে দৌড়ে একটু দূরে গিয়ে মোবাইল ব্যবহার করে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করি। ওই সময় শামীমের সহযোগী রাসেল আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর আমি রাসেলের কাছ থেকে দৌড়ে সরে গিয়ে গাড়িতে থাকা পিস্তল নিয়ে কাছে গিয়ে আমার মোবাইল ফোন ফেরত চাই। যেহেতু আমার লাইসেন্স করা পিস্তল অবশ্যই আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করার অধিকার রয়েছে। তবে তারা চাচ্ছিল আমি যেন তাদেরকে লক্ষ করে গুলি করি। এজন্য তারা আমাকে রাগান্বিত করার জন্য গালিগালাজ করছিল। তবে আমি কাউকে গুলি করিনি। কেউ আহতও হয়নি। কিন্তু তারা নাটক সাজিয়ে আহত হওয়ার অভিনয় করেছে। অথচ তারা যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছে সেখানে বলা হয়েছে, আমি নাকি গুলি করেছি। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।
জানা গেছে, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর হারুন অর রশিদ রূপগঞ্জের টেকনোয়াদ্দা এলাকায় আট শতাংশ জমি কেনেন। একই দাগে ২২ শতাংশ জমি ক্রয় ও বায়না সূত্রে মালিকানা দাবি করেন স্থানীয় শামীম নামে আরেক ব্যক্তি। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) বিকালে হারুন অর রশিদ তার জমিটি সার্ভেয়ারকে দেখাতে নিয়ে যান। এ খবর জানতে পেরে শামীম ও তার লোকজন বাধা দেন। এর এক পর্যায়ে শামীমের লোকজন তার উপর হামলা করে মারধর করে। এমনকি তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা হারুন তার গাড়িতে থাকা লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে তাদের দিকে তাক করে তার মোবাইল ফোন ফেতন চান। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
অভিযুক্ত হামলাকারীরা হলেন- শামীম আহমেদ (৩৫), রাসেল আহমেদ (৩৩) সহ অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জন। এ বিষয়ে জানাতে অভিযুক্ত শামীম আহমেদের ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার উপর হামলার হয়েছে ও তাকে মারধর করা হয়েছে। তার চোখ ফুলে গেছে। তাছাড়া ওই দিন মারধরের এক পর্যায়ে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে শামীম ও তার লোকজন তার ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। এরপর তিনি লাইসেন্স করা অস্ত্র বের করলেও কাউকে গুলি করেননি। এ ঘটনায় কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments