
চুয়াডাঙ্গায় নামাজরত অবস্থায় দোদুল হোসেন রিন্টু (৫৩) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারই ছেলে রিফাত হোসেন (১৭)। শনিবার মাগরিবের নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে। এসময় স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে নেয়ার কিছু সময়ের মধ্যে দোদুল হোসেনের মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরপর অভিযুক্ত রিফাতকে আটক করা হয়েছে। নিহত দোদুল হোসেন চুয়াডাঙ্গার পলাশপাড়ার বাসিন্দা এবং একসময় ইতালি প্রবাসী ছিলেন। আর তার ছেলে রিফাত চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার আলিয়া মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং একজন হাফেজ।
নিহত দোদুলের মেয়ে মোছা. ঋতু জানান, তার ভাই রিফাত মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়েছিল। মোবাইলে কোনো গেম না খেললেও সবসময় মোবাইল নিয়ে বসে থাকতো। এ নিয়ে বাবা তাকে নিষেধ করতেন। শনিবার ভোরে নামাজের পর ৬টার দিকে দোদুল হোসেন রিফাতের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। এতে রিফাত ক্ষুব্ধ হয়।
ঋতু বলেন, ‘রাতে আব্বু তারাবির নামাজ পড়ছিলেন। আম্মু ওযু করছিলেন, আর আমি পাশের রুমে ছিলাম। হঠাৎ আব্বুর চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখি, রিফাতের হাতে ধারালো ছুরি। সে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করছে, আব্বু ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। আমি আর আম্মু কোনো রকম ওকে সরিয়ে দিই। এসময় সে হাতে থাকা ছুরিটি মেঝের ওপর ছুড়ে ফেলে দেয়। ততক্ষণে চিৎকারে পাড়ার লোকজন বাড়িতে ছুটে আসে এবং আব্বুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান।’
নিহত দোদুলের বন্ধু ইন্তাজ আলী বলেন, ‘দোদুল আমাদের পাড়ার সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। তার ছেলেও ভালো ও ভদ্র ছিল। সে একজন হাফেজও। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে, কিন্তু রিফাত যে এমন কাণ্ড ঘটাবে, তা অকল্পনীয়। ছেলের হাতে বন্ধুকে খুন হতে হবে, তা কখনো ভাবতেও পারিনি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তারেক জুনায়েদ বলেন, ‘রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন তিনি অচেতন ছিলেন। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল, পিঠে গভীর ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘ছেলেটির মোবাইল আসক্তি ছিল, তাই বাবা তাকে ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। ঘটনার দিন ছেলের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে সে রাতে নামাজরত অবস্থায় বাবাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর রিফাতকে আটক করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।’
মানবকণ্ঠ/আরআই
Comments