
ঝালকাঠিতে ‘শয়তানের নিশ্বাস’ বা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ ব্যবহার করে এক গৃহবধূর স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৯ মার্চ রাজাপুর উপজেলার পূর্ব রাজাপুরের আঁটোচালক বাবুলের (৬২) স্ত্রীর রোজিনা বেগমের (৫০) সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ওই গৃহবধূ রাস্তায় ‘শয়তানের নিশ্বাস’ এর বশে পড়ে বাসা থেকে নগদ দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার এনে ছিনতাইকারীদের দেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাবুল জানান, গত ১৯ মার্চ ব্যক্তিগত কাজে ঝালকাঠি ডিসি অফিসে যান তিনি। দুপুর ১২টার দিকে বাসায় ফিরে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানতে পারেন। এ ব্যাপারে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। রাজাপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছিনতাইকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে।
এ বিষয় গৃহবধূ রোজিনার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি গত ১৮ মার্চ ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা তুলি। ১৯ মার্চ সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে অগ্রণী ব্যাংকের দিকে রওনা হই। পথে আমার বাসা থেকে একটু সামনে ১২০ পায়ের মতো দূরত্ব হবে এমন স্থানে হঠাৎ করে আমার পেছন থেকে একটা মোটরসাইকেল আসে এবং একজন লোক নামে রাস্তার অপর পাশে। আমার সামনেও একজন লোক নামে। দুজনে কোলাকুলি করে এবং বলে—কুমরউদ্দীন মুসল্লির ছেলে আপনাকে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। আপনি একটু আমাকে দোয়া করে দিন—আমরা পেছন থেকে নামা লোকটি সামনে থেকে নামা লোকটি বলতেছে।’
‘এটি দেখে আমি হেঁটে সামনে চলে যাই। তখন পেছন থেকে আমাকে ডেকে বলে—এই ভাবি কুমরউদ্দীন মুসল্লির ছেলের একটু দোয়া নিয়ে যান। তখন আমি পুরুষ মানুষের দোয়া মহিলা মানুষ নেয় না—এ বলে সামনে চলে যাই। তখন পেছন থেকে একজন দৌড়ে এসে একটি রঙিন পাথর নাকের কাছে ধরে এবং বলে দেখেন কত সুন্দর ঘ্রাণ। এরপর আমাকে বিভিন্ন কথা বলে এবং বলে বাসার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার সব কিছু নিয়ে আসেন। আমি তা বাসায় গিয়ে নিয়ে এসে তাদের হাতে তুলে দেই। বাসায় স্বর্ণালঙ্কার আনতে গেলে মেয়ে বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে আমি সব নিয়ে তাদের কাছে তুলে দেই।’—বলেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ।
এ বিষয়ে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ছিনতাইকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
‘শয়তানের নিশ্বাস’ বা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ একধরনের ড্রাগ, যার নাম ‘স্কোপোলামিন’। এই ‘শয়তানের নিশ্বাস’ দিয়ে মানুষকে হিপনোটাইজ বা বশ করা হয়। আর একবার বশ করতে পারলে অপরাধীরা হাতিয়ে নেয় ব্যক্তির মূল্যবান জিনিসপত্র। স্কোপোলামিন একধরনের সিনথেটিক ড্রাগ। এর মূল উপাদান আসে ধুতরা ফুল থেকে। ধুতরা ফুলের সঙ্গে আরও কিছু উপাদান যোগ করে তৈরি করা হয় স্কোপোলামিন। এটি তরল ও পাউডার—দুই রকমেরই হয়।
স্কোপোলামিন হায়োসিন নামেও পরিচিত। এটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ যা কয়েক ধরনের রোগ ও অসুস্থতা যেমন-মোশন সিকনেস, অপারেশন পরবর্তী বমি বমি ভাব এবং পার্কিনসন রোগের কাঁপুনির চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এটিকে ধরা হয় প্রথম ‘ট্রুথ সেরাম’ বা সত্য বলানোর ওষুধগুলোর একটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে তথ্য বের করতে এর ব্যবহারের নজির পাওয়া যায়। এর অন্ধকার দিকগুলোর কারণেই এটি পরিচিত। পুরো বিশ্বে এটি ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক ড্রাগ’ হিসেবে স্বীকৃত।
Comments