Image description

মাদারীপুরে প্রতিদিন যানজটে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বাসিন্দারা। কোথাও পার্কিং-এর ব্যবস্থা না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শহরবাসী। লাগামছাড়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা অবাধ চলাচল, অদক্ষ চালক, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেওয়া এবং যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে বাড়ছে যানজট। দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ শহরবাসীর। যদিও পুলিশ বলছে, যানজট কমাতে তৎপর তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরাণবাজার। জেলার সবচেয়ে বড় মার্কেট এটি। সারি সারি দোকান, তার সামনেই দীর্ঘ যানবাহনের সারি। চাঁনমারি মসজিদ রোড থেকে পুরাণবাজার, আর কাজীরমোড় থেকে মিলন সিনেমা পর্যন্ত প্রতিদিন লেগেই থাকে যানজট। এছাড়া কাঠপট্টি, ইটেরপুল, শকুনী লেকের পূর্বপাড়ের চিত্রও একই রকম।

জানা যায়, যাত্রা আরামদায়ক হওয়ায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এই বাহনে চলাচল করেন। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কিছুদূর পরপর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক ও রিকশা অবৈধ স্ট্যান্ড। মাত্রাতিরিক্ত এই যানবাহনের কারণে সড়কে অন্য যান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শহরের সবখানেই লেগে থাকছে ইজিবাইক ও রিকশা জটলা।

তবে চালকদের দাবি, ফুটপাত দখল হওয়া আর যত্রতত্র মোটরসাইকেল পার্কিং-এ কমছেনা এই যানজট। অবশ্য পুলিশ বলছে, যানজট কমাতে ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে নেয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন মাদারীপুর শহরে ৮-১০ হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করে। দিনব্যাপী এভাবেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এতে একদিকে বাড়ছে ভোগান্তি, অন্যদিকে হচ্ছে সময়ের অপচয়। শহরের কোথাও পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় এর থেকে মুক্তি মিলছে না বাসিন্দাদের।

মাদারীপুরের পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী গোলাম আজম ইরাদ বলেন, ফুটপাত দখল করে ছোট ছোট দোকান গড়ে ওঠার কারণেই যানজট লেগে থাকছে। এগুলো উচ্ছেদ হলে এই ভোগান্তি কমে যাবে। এছাড়া শহরের মোড়ে মোড়ে ও মার্কেটের সামনে মোটরসাইকেল পার্কিং বন্ধ করতে হবে।

সদর উপজেলার ছিলারচর থেকে মার্কেট করতে আসা ইজিবাইকের যাত্রী নুসরাত আক্তার বলেন, ৩০ মিনিট ধরে একই স্থানে যানজটে আটকা আছি। রমজান মাসে এমন পরিস্থিতি হবে, জানা ছিল না। তাহলে নিজ এলাকায়ই ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলতাম। শহরে আসতাম না।

কলেজ শিক্ষার্থী মাহাবুর শিকদার বলেন, পুরাণবাজার আসলে যানজটে পড়তেই হবে। এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর থেকে কবে মুক্তি মিলবে সেটা আমাদের জানা নেই। শুধু ভোগান্তি বেড়েই চলছে।

ইজিবাইক চালক জসিম মিয়া বলেন, যানজটের অন্যতম কারণ হলো যত্রতত্র মোটরসাইকেল পার্কিং আর ফুটপাতে গড়ে ওঠা দোকান। এগুলো না থাকলে যানজট থাকবেই না।

আরেক চালক ফরিদ হোসেন সরদার বলেন, ঈদের সময় মানুষের একটু চাপ বেশি। আর বেড়েছে যানবাহনও, সেইসাথে যানজটও বেড়েছে। এর কারণ হলো, শহরের মার্কেটগুলোর সামনে গড়ে ওঠো দোকান আর চার চাকার যানবাহন প্রবেশ। এগুলো বন্ধ হলে যানজট থাকবেনা। আমরাও এখন শহরে ইজিবাইক বা রিকশা নিয়ে প্রবেশ করতে চাই না। কারণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা থাকতে হয়। নিজেদেরও অনেক ক্ষতি হয়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যানজট কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ও মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশও কাজ করছে। এতে যোগ দিয়েছে থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ। শহরের সড়কগুলো ছোট হওয়ায় দীর্ঘ সময় যানজট লেগেই থাকছে। এর থেকে মুক্তি মিলতে শহরবাসীকে সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র মোটরসাইকেল পার্কিং বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনে তিনচাকার যান বাণিজ্যিক এলাকায় প্রবেশ না করলে এর থেকে অচিরেই মুক্তি মিলবে।