
রাত পোহালে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু ঈদের আনন্দের রেশমাত্র নেই চাঁদপুরের মতলব উপজেলার জেলেদের পরিবারে। জাটকা রক্ষায় দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) নদীতে মাছ ধরা বন্ধ। তাই সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে পারছেন না তারা। এমনকি ঈদের দিন চিনি-সেমাই কেনারও সামর্থ্য নেই অনেকের। কেউ কেউ আশা করছেন, ঈদের আগে দু’একদিন ইলিশ ধরতে পারলে বিক্রি করে খরচটা চালানো যেত। কিন্তু সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানা যায়, জাটকা রক্ষায় ১ মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মেঘনার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দুই উপজেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে ১৪ হাজার ৮৪০ জন। মাসে ৪০ কেজি করে ভিজিএফের খাদ্যসহায়তা (চাল) পাচ্ছেন ১২ হাজার ২৯৬ জন জেলে। খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন না ২ হাজার ৫৪৪ জন জেলে। এর মধ্যে সহায়তাবঞ্চিত ইসলাম ধর্মাবলম্বী জেলে ১ হাজার ২৭২ জন।
শনিবার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, মালপাড়া, মোহনপুর, আমিরাবাদ, নন্দলালপুর এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর ও কাজিরবাজার এলাকার জেলেপাড়ায় দেখা যায়, অনেক জেলে পরিবারে ঈদের আমেজ নেই। মনমরা হয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা। মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এবং রোজগার না থাকায় অধিকাংশ জেলের পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। ঘরে চুলা জ্বলছে না তাঁদের। আর্থিক সমস্যায় ঈদের কেনাকাটা ও সওদা করাও বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
ষাটনল এলাকার জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিছে, আমরা তা পালন করছি। সরকার যে সহযোগিতা দেয় তা আমি পাই না। আমরা খাইয়া, না খাইয়া খুব কষ্টে দিন কাটাইতেছি। গত এক সপ্তাহের বেশি আমাগো সংসার চলে না। বউ-পোলাপাইন নিয়া খাইয়া-না খাইয়া আছি। আমাগো কোনো কামকাজ নাই। এমন একটা ঈদ আইতাছে, কিন্তু কিছু করার আমাগো পক্ষে সম্ভব না। তিন-চারটা বাচ্চা স্কুল-মাদ্রাসায় পড়াই, তাদের পড়ালেখাও বন্ধ। বেতন দিতে পারি না। আমরা খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। সরকার কিছু সাহায্য দিলে উপকার হইতো।
আমিরাবাদ এলাকার জেলে মো. নয়ন মিয়া বলেন, ‘গত এক মাস ধইরা মাছ ধরতে পারি না। পকেটে টেয়াপইসা নাই। রোজগার বন্ধ। ঘরে সাতজন খানেওয়ালা। এখন পর্যন্ত সরকার (মৎস্য বিভাগ) থেইক্কা কোনো খাদ্য বা টেয়াপইসা পাই নাই। লিস্টে নাম থাকলেও চাল দিতাছে না। পরিবার লইয়া এক-আধা পেট খাইয়া আছি। সামনে ঈদ। ঘরে ভাতই জোডে না। ঈদের কেনাকাটা ও সওদা করুম ক্যামনে। এবার আমাগো ঈদ করাই অইব না। সব মাটি।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, জাটকা রক্ষার কর্মসূচির আওতায় ভিজিএফের খাদ্যসহায়তার জন্য তাঁরা উপজেলার সব নিবন্ধিত জেলের তালিকা মৎস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ কম আসায় অনেক জেলে খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন না। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থবরাদ্দও হয়নি। এ জন্য তাঁদের আর্থিক কষ্ট হচ্ছে।
Comments