Image description

ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ মঙ্গলবার। এর ফলে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে চাল আমদানি। আমদানি বন্ধের খবরে বন্দরে প্রতি কেজি চালের দাম দুই-তিন টাকা করে বেড়েছে। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানির মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন আমদানিকারকরা।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে স্বর্ণা, শম্পা কাটারি ও মিনিকেট চাল আমদানি অব্যাহত আছে। আগে বন্দর দিয়ে ৫০-৬০ ট্রাক চাল আমদানি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ১২০-১৫০ ট্রাক করে আমদানি হচ্ছে। তবে আমদানি বাড়লেও চালের দাম আগের তুলনায় দুই-তিন টাকা করে বেড়েছে।

বন্দরে কিছুদিন আগে স্বর্ণা চাল ৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকা কেজি দরে। আর সরু জাতের সম্পা কাটারি ৬৪-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৭-৬৮ টাকায়। কেউ কেউ আরও এক থেকে দুই টাকা বাড়তি দাম চাইছেন।

এদিকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেন সব চাল দেশে প্রবেশ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সোমবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিনেও ভারত থেকে পণ্য আমদানি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমদানি-রফতানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা।


পাইকারি ব্যবসায়ী ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘দুদিন আগেও শম্পা কাটারি চাল কিনেছি ৬৪-৬৫ টাকা কেজি দরে। রবিবার সেই চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেড়ে যায়। সোমবার কিনতে এসে দেখি কেজিতে দুই-তিন টাকা বেড়ে গেছে। আমদানিকারকরা বলছেন, আমদানির শেষ সময় ১৫ এপ্রিল। এরপর ভারত থেকে আর চাল আসবে না। ফলে আমদানিকারকরা কিছু চাল বিক্রি করলেও বেশিরভাগই বন্দর থেকে খালাস করে নিজস্ব গুদামে রেখে দিচ্ছেন। অনেক আমদানিকারক বিক্রি করতে চাইছেন না। সামনে সংকট তৈরি হবে ভেবে মজুত করছেন। তখন বেশি দামে বিক্রি করবেন তারা।’  

এ বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চাল আমদানির অনুমতির মেয়াদ ছিল ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর আর বাড়ানো হবে না। আমদানিকারকদের বেশ কিছু চালবোঝাই ট্রাক ভারতের অভ্যন্তরে আটকা রয়েছে। সেইসঙ্গে এলসি পেন্ডিং রয়েছে। সব চাল দেশে প্রবেশ করেনি। এর ওপর যদি ১৫ এপ্রিলের পর আর মেয়াদ না বাড়ানো হয়, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

তিনি বলেন, ‘আমদানি বন্ধের খবরে বিভিন্ন মোকামে চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় আমদানি না হওয়ায় সব ধরনের চালের দাম দুই-তিন টাকা করে বেড়ে গেছে। আমরা চাচ্ছিলাম বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম থাকে। এজন্য আমদানির সময়সীমা আরও একমাস বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। তাতে আমদানি যেমন অব্যাহত থাকবে বাজারে চালের দামও বাড়বে না। আর যদি সময়সীমা না বাড়ানো হয় এবং আমদানি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে চালের দাম আরও বাড়বে। কারণ দেশে আমদানিকৃত চাল ঢুকলেই দাম কম থাকে, আর যদি না ঢুকে তাহলে দাম বেড়ে যায়।’

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, ‘চাল আমদানির অনুমতির সময়সীমা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সেই পর্যন্ত অনুমতিপ্রাপ্ত আমদানিকারকরা আমদানি করতে পারবেন। বর্তমানে সময়সীমা থাকায় শেষ মুহূর্তে চলে আসায় চাল আমদানিতে জোর দিয়েছেন আমদানিকারকরা। প্রতিদিন বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হচ্ছে, তার বেশিরভাগ চাল।

বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক করে চাল আমদানি হচ্ছে। আমদানি করা এসব চাল যেন বন্দর থেকে দ্রুত ছাড়করণ করে দেশের বাজারে বাজারজাত করতে পারেন, সেজন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা পণ্যের বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করামাত্র আমদানি করা চাল পরীক্ষণ শুল্কায়ন করে শুল্ক আহরণ সাপেক্ষে দ্রুত ছাড় করে দেওয়া হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত ১১ নভেম্বর থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দুই লাখ ৫২ হাজার টন চাল আমদানি হয়।’