ঘূর্ণিঝড় ‘মনস্থার’-এর তাণ্ডবে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ঘোড়াচরা গ্রামে নেমে এসেছে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। রাতভর প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গেছে পানিতে। পাকা ধান লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে, কলা বাগান ভেঙে গেছে, শীতকালীন সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে—যেন কৃষকের স্বপ্নের মাঠে এখন নিঃস্বতার ছায়া।
শনিবার সকালে দেখা যায়, ঘোড়াচরা গ্রামের এক বৃদ্ধ কৃষক কাদামাখা মাঠে দাঁড়িয়ে হাহাকার করছেন। চারপাশে জমে থাকা পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের চিত্র। গ্রামের শত শত বিঘা জমির ধান, কলা ও সবজি এক রাতের ঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক আবদুল জলিল বলেন, এবারের ধানেই সংসার চলার আশা ছিল। কিন্তু ‘মনস্থার’ সব আশা কেড়ে নিল। এখন ঘরে খাবার নেই, জমিতে ধান নেই—সবই শেষ।
আরেক কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান, রাতভর বাতাসে মনে হচ্ছিল, সব উড়ে যাবে। সকালে উঠে দেখি, ক্ষেতের সব ধান মাটিতে লুটিয়ে আছে। কষ্টে বুকটা ভেঙে যায়।
বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আবদুল মোমিন বলেন, ঘোড়াচরা, কাঁঘাতি ও হরিনা গ্রামের অধিকাংশ জমি এখনো পানির নিচে। কৃষকেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সরকার যদি পাশে দাঁড়ায়, তারা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস. এম. নাসিম হোসেন জানান, প্রাথমিক হিসাবে কাজিপুর উপজেলায় প্রায় ৭০০ হেক্টর জমির ধান ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাগবাটি ইউনিয়নেই ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং পুনর্বাসন সহায়তার জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।
ঘূর্ণিঝড় ‘মনস্থার’-এর প্রভাবে সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে। ঘোড়াচরা গ্রামের মানুষ তাকিয়ে আছে সরকারি সহায়তার দিকে—একটুখানি আশার আলোয় যেন আবারও ফসলের মাঠে ফিরে আসে সবুজ।
শেষ বিকেলে দেখা যায়, ভেজা মাঠে এক কৃষক নিঃশব্দে তাকিয়ে আছেন চারপাশে লুটিয়ে থাকা ধানের দিকে—ঘূর্ণিঝড় ‘মনস্থার’-এর তাণ্ডবের এক নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে।




Comments