সুন্দরবন-সংলগ্ন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন। অনুকূল আবহাওয়া, সময়মতো বৃষ্টি ও কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শে মাঠজুড়ে সোনালি শীষে ঝলমল করছে কৃষকের স্বপ্ন। কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে নবান্নের উৎসবের আমেজ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানায়, এবার ২৬ হাজার ৪১৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। প্রতি বিঘায় ১৬-২০ মন ধান পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। গত বছরের তুলনায় বিঘাপ্রতি ৩-৪ মন বেশি ফলন হচ্ছে। বাজারে ধানের দামও চড়া—প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪৫০ টাকায়। বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ ৩ হাজার টাকার মধ্যে থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকার ওপরে।
ইতোমধ্যে উফশী জাতের (ব্রি-১১, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫২, ব্রি-৭৫, ব্রি-৭৬, বি আর-২৩, বি আর-১১) ধান কাটা শুরু হয়েছে। স্থানীয় জাতের ধান কাটা শুরু হবে আরও দুই সপ্তাহ পর। হোগলাবুনিয়া, নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া, বলইবুনিয়া, রামচন্দ্রপুর, হোগলাপাশা ও বনগ্রাম—এ সাত ইউনিয়নে ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে।
হোগলাবুনিয়ার কালিকাবাড়ি গ্রামের কৃষক আবুল বাশার মোল্লা, সবুজ মোল্লা, সিদ্দিক মোল্লা, সজল মোল্লারা জানান, “এবার পোকা-মাকড়ের আক্রমণ খুব কম। দামও ভালো পাচ্ছি। তাই মুখে হাসি ছাড়া আর কিছু নেই।”
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রকৃতি সহায়ক থাকায় কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। বড় কোনো দুর্যোগ না এলে পুরোটা ধানই নিরাপদে ঘরে উঠবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, কৃষি অফিসের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ের পরামর্শের কারণেই এ সাফল্য। তিনি আরও বলেন, ওয়াপদা বাঁধের কারণে লবণাক্ততা কমে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ হওয়ায় এ অঞ্চলে এখন শুধু ধান নয়, আগাম সবজি চাষেও কৃষকরা ঝুঁকছেন।
হেমন্তের এই সময়টা এখন গ্রামবাংলায় নবান্নের উৎসবের। নতুন ধান কেটে ঢেঁকিতে ভেঙে পিঠে-পায়েস বানানোর ধুম পড়েছে কৃষক পরিবারে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে উঠেছেন এই প্রাচীন লোক উৎসবে। সোনালি ধানের শীষে এবার সত্যিই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মোরেলগঞ্জের কৃষকের স্বপ্ন।




Comments