Image description

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাধার মুখে পাইপ গুটিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বিএমএ গেট সংলগ্ন সাগর উপকূলে এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাটিয়ারী সাগর উপকূলে কেএসএ স্টিল নামে একটি পরিত্যক্ত শিপইয়ার্ড রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিএমএ গেট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই ইয়ার্ডে সম্প্রতি বিশাল আকারের গর্ত খনন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল সাগর থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে সেখানে মজুদ করা। এজন্য ইয়ার্ড থেকে সাগরের দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার পাইপলাইনও বসানো হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিলে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেয়। তোপের মুখে বালু ব্যবসায়ীরা তাদের সরঞ্জাম ও পাইপ নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

শিপইয়ার্ডে দায়িত্বরত আনসার সদস্য বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই ইয়ার্ডে কোনো স্ক্র্যাপ জাহাজ আনা হয়নি বা কাটা হচ্ছে না। ইয়ার্ডটি বর্তমানে বালু উত্তোলনকারীদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সাগর থেকে তোলা বালু রাখার জন্যই এখানে গর্ত করা হয়েছে।’

বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে স্থানীয় জেলে ও বাসিন্দারা জানান, ‘সাগর থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে সাগরের গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। এতে মাছ ধরার নৌকা রাখার ঘাটগুলো বিলীন হয়ে যাবে এবং জেলেদের বসবাসের স্থান সংকুচিত হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী হাজী কামাল উদ্দিন এবং ফরিদুল আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘শিপইয়ার্ডের মালিক সরকার থেকে জায়গাটি লিজ নিয়েছেন স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার জন্য। কিন্তু তারা অবৈধভাবে বালু মহাল তৈরি করছেন। এতে সাগরে ভাঙন দেখা দেবে এবং আশপাশের কৃষিজমি লোনা পানিতে নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।’

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে পাহাড় এবং পশ্চিমে সাগর। মাত্র এক কিলোমিটার জায়গার মধ্যে সাগর থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে পরিবেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। স্থানীয় বসতিরা গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।’

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সমুদ্র থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। শিপইয়ার্ডগুলো কেবল স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙার জন্য লিজ দেওয়া হয়। সেখানে বালু মহাল তৈরি করার চেষ্টা করলে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ বালু উত্তোলন করলে সেটি দেখার দায়িত্ব তাদেরও।